জুলাই আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা সেবা নিতে গিয়ে হাসপাতালে রোগী ও স্বজনদের পড়তে হয়েছে একের পর এক বাধা। প্রশাসনিক জটিলতা, অনিয়ম, বিলম্ব, অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষানিরীক্ষা থেকে শুরু করে মৃত্যুর পর লাশ হস্তান্তরেও নানা বিড়ম্বনা পোহাতে হয়েছে তাদের। সম্প্রতি পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, চিকিৎসা সেবায় অন্তত ২০ ধরনের বাধা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর সিরডাপ ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারে এক সভায় এ গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) বিজ্ঞানী আহমেদ এহসানুর রহমান। গবেষণাটি করেছে বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ ও অ্যাসোসিয়েটস ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (এমিনেন্স)। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান।
গবেষণায় বলা হয়েছে, সরকারি হাসপাতালগুলোতে রাজনৈতিক প্রভাব, যন্ত্রপাতির ত্রুটি, প্রশাসনিক দেরি ও জনবল ঘাটতির কারণে চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় ব্যাপক বিশৃঙ্খলা দেখা গেছে। আহতদের চিকিৎসায় বিলম্ব, তথ্যসংগ্রহ ও আইনগত প্রক্রিয়ায় অনিয়ম এবং মৃত্যুর পর লাশ হস্তান্তরে অযথা সময়ক্ষেপণ রোগীর স্বজনদের ভোগান্তি বাড়িয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও অনিয়ম কম নয়। গবেষণায় উঠে এসেছে, অনেক হাসপাতাল অতিরিক্ত বিল দাবি করছে, অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষানিরীক্ষা করাচ্ছে এবং মৃত্যুর পর বিল পরিশোধ না হলে লাশ আটকে রাখার মতো অমানবিক আচরণ করছে। গবেষকদের মতে, এসব আচরণ শুধু দায়িত্বহীনতা নয়, মানবিকতার পরিপন্থিও।
গবেষণা উপস্থাপনের সময় আহমেদ এহসানুর রহমান বলেন, হাসপাতালগুলোর নীতি ও নেতৃত্বের দুর্বলতা, আধুনিক ব্যবস্থাপনার অভাব এবং মানবিক প্রশিক্ষণের ঘাটতি এই সংকটকে গভীর করেছে। মৃত্যুর পরও রোগীর মর্যাদা রক্ষা করা এখনো স্বাস্থ্যব্যবস্থার অংশ হিসেবে বিবেচিত হয় না।
গবেষণায় গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়েও আলোচনা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত অসংখ্য প্রতিবেদনে প্রশাসনিক অনিয়ম ও জবাবদিহির অভাব স্পষ্ট হলেও নীতিনির্ধারক পর্যায়ে এর প্রতিফলন খুব কমই দেখা যায়।
গবেষক দল বলেছে, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তিনির্ভর রেকর্ড সংরক্ষণ, মৃত্যুর পর দ্রুত সেবা প্রদানের নির্দেশিকা প্রণয়ন, প্রশাসকদের প্রশিক্ষণ ও স্বজনবান্ধব আচরণ নিশ্চিত করতে হবে।
তারা সতর্ক করে বলেন, এখনই যদি জবাবদিহিমূলক ও মানবিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তোলা না যায়, তবে হাসপাতালগুলোতে অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা ও ভোগান্তিই হয়ে থাকবে সাধারণ মানুষের নিত্যসঙ্গী।