রাজশাহীতে ঐতিহ্যবাহী ‘ওয়ানগালা’ ও ‘লবান’ (নবান্ন) উৎসব উদযাপিত হয়েছে। গারো, সাঁওতাল, পাহাড়িরা, মাহালি, ওঁরাও এই পাঁচ সম্প্রদায় প্রতি বছর তাদের শস্য দেবতা ‘মিসি সালজং’-এর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে এবং নতুন ফসল খাওয়ার অনুমতি চেয়ে এই উৎসবটি পালন করে আসছেন। এ বছরও গতকাল সকাল ১০টায় নগরীর বাগানপাড়ায় অবস্থিত উত্তম মেষপালক ক্যাথিড্রাল গির্জা চত্বরে দেবতাদের পূজার মাধ্যমে উৎসবের আনুষ্ঠানিক শুরু হয়। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান যেমন ‘আমুয়া’ ও ‘রুগালা’ পালনের পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠানে গারো শিল্পীরা তাদের নিজস্ব ভাষায় গান পরিবেশন করেন, যা উৎসবে উপস্থিত দর্শকদের মুগ্ধ করে। বিশেষ আকর্ষণ ছিল গারোদের ঐতিহ্যবাহী ‘জুম নাচ’, যা উৎসবের পরিবেশে এক আনন্দঘন পরিবেশ সৃষ্টি করে।
উৎসবের আলোচনা পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রাজশাহী কাথলিক ধর্মপ্রদেশের ডিডি বিশপ জের্ভাস রোজারিও। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি বহু-জাতি, ভাষা ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্যময় অসাম্প্রদায়িক দেশ। এ ধরনের উৎসবের মাধ্যমে জাতিগত ঐতিহ্য রক্ষায় আমাদের সক্রিয় ভূমিকা পালন করা উচিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী উৎসব ওয়ানগালা ও লবান আমাদের একতা এবং সমন্বয়কে প্রতিফলিত করে।’ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী কাথলিক ধর্মপ্রদেশের ভিকার জেনারেল ফাদার ফাবিয়ান মারান্ডা, রাজশাহী নানকিং গ্রুপের প্রোপাইটর এহসানুল হুদা, রাজশাহী পার্লার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মিসেস রুকসানা হুদা এবং উত্তম মেষপালক ক্যাথিড্রাল গির্জার পালকীয় পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ফ্রান্সিস সরেন। তারা সবাই গারো সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
জানা যায়, ওয়ানগালা ও লবান (নবান্ন) উৎসব মূলত জুম চাষের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি উৎসব। নতুন ফসল তোলার পর নকমা (গ্রামপ্রধান) গারো সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনা করে উৎসবের তারিখ নির্ধারণ করেন। রাজশাহীতে বসবাসরত গারোরা দীর্ঘ এক যুগ ধরে প্রতি বছর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে এই উৎসবটি উদযাপন করে আসছে। উৎসবের দিন গির্জার মাঠে তারা একত্রিত হন। একে অপরের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে এবং নিজেদের ঐতিহ্যবাহী খাবারের দোকানগুলোতে ঘুরে ঘুরে নানা ধরনের খাবারের স্বাদ গ্রহণ করেন। জুমের আলু, কুমড়া, শামুক, কাঁকড়ার মতো ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো ছিল উৎসবের বিশেষ আকর্ষণ।
রাজশাহী ওয়ানগালা ও লবান উৎসব উদযাপন কমিটির নকমা লোটাস চিসিম বলেন, আমরা আমাদের ঐতিহ্যকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য এ উৎসবটি পালন করি।’