দেশের সব উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে সাপের কামড়ের অ্যান্টিভেনম পর্যাপ্তভাবে সরবরাহ নিশ্চিত করতে সিভিল সার্জনদের নির্দেশ দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। প্রতিটি উপজেলা সদরের কমপক্ষে দুটি ফার্মেসিতে অ্যান্টিভেনম রাখার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
এই তথ্য বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। রিটের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মীর এ কে এম নূরুন্নবী শনিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য, গত ১৭ আগস্ট হাইকোর্ট উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম সরবরাহ নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেন। স্বাস্থ্য সচিব, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। রিটের প্রাথমিক শুনানি হয়েছিল ১৮ আগস্ট, যেখানে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মনসুর অংশগ্রহণ করেন। রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মীর এ কে এম নূরুন্নবী, সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট ইসমাঈল হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শফিকুর রহমান ও তানিম খান এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির।
এর আগে, সাপের কামড়ের অ্যান্টিভেনম সরবরাহের জন্য হাইকোর্টে রিট করেন অ্যাডভোকেট মীর এ কে এম নূরুন্নবী। রিটের সঙ্গে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করা হয়েছিল। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত দেশে সাপের কামড়ে ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই পাঁচ মাসে ৬১০ জন সাপের দংশনের শিকার হয়েছেন।
রাজধানীর মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদফতরে রাসেলস ভাইপার নিয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন এ তথ্য জানান। তিনি জানান, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলতি বছর জানুয়ারি থেকে ৪১৬ জন সাপের দংশনের শিকার হয়ে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে বিষধর সাপের কামড় ৯১টি এবং চন্দ্রবোড়া (রাসেলস ভাইপার) ১৮টি। এ দংশনের ফলে মোট ১১ জন মারা গেছেন, যার মধ্যে পাঁচজন চন্দ্রবোড়ার কামড়ে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সাম্প্রতিক সময়ে রাসেলস ভাইপার নিয়ে দেশে বিভিন্ন গুজব ও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশে সাপদংশনকে জনস্বাস্থ্যের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ২০২২ সালের জাতীয় জরিপ অনুযায়ী দেশে বছরে চার লাখের বেশি মানুষ সাপের কামড়ে আক্রান্ত হন, যার মধ্যে প্রায় ৭,৫০০ জনের মৃত্যু হয়। প্রধান বিষধর সাপের মধ্যে গোখরা, কালাচ (ক্রেইট), চন্দ্রবোড়া (রাসেলস ভাইপার) ও সবুজ সাপ অন্যতম। কিছু সামুদ্রিক সাপের কামড়ের তথ্যও আছে।
চন্দ্রবোড়া ভাইপারিড গ্রুপের একটি বিষধর সাপ। বাংলাদেশে চন্দ্রবোড়ার উপস্থিতি ও এর কামড়ে মৃত্যুর ইতিহাস ১৯২০ সাল থেকেই স্বীকৃত। ২০১৩ সালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া সাপের কামড়ের প্রথম রিপোর্ট লিপিবদ্ধ হয়। প্রাথমিকভাবে রাজশাহী ও বরেন্দ্র অঞ্চলে এর প্রভাব বেশি দেখা গেলেও পরে ধীরে ধীরে ২৭টি জেলায় বিস্তৃত হয়েছে।
ডা. রোবেদ আমিন জানান, বিষধর সাপের কামড়ের কার্যকর চিকিৎসা অ্যান্টিভেনম। দেশের প্রধান বিষধর সাপের বিষ সংগ্রহ করে ঘোড়ার শরীরে প্রয়োগ করা হয় এবং ঘোড়ার রক্ত থেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় অ্যান্টিভেনম তৈরি করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে অ্যান্টিভেনম তৈরি করা হয় না; ভারতে তৈরি চারটি প্রধান বিষধর সাপের অ্যান্টিভেনম সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য অধিদফতর বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে সরবরাহ করে। অ্যান্টিভেনমের ক্রয়, বিতরণ, সংরক্ষণ, প্রয়োগ ও প্রয়োগ পরবর্তী নজরদারি সম্পর্কে স্পষ্ট নীতিমালা না থাকলেও, এর সুফল লক্ষ্যণীয়।
বিডি প্রতিদিন/একেএ