উত্তরাঞ্চলের জেলা লালমনিরহাটসহ রংপুর বিভাগে হঠাৎ করেই দিন ও রাতের তাপমাত্রার ফারাক বেড়ে গেছে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। দিনে প্রচণ্ড গরম, আর রাতে হালকা শীত অনুভূত হচ্ছে। এমন আবহাওয়ার হঠাৎ পরিবর্তনের কারণ কী-এ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে। আবহাওয়ার এমন বিরূপ আচারণে দেখা দিয়েছে নানা ধরনের রোগবালাই।
লালমনিরহাটের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আজমল হক বলেন, প্রতিদিন গড়ে ২৫ জন শিশু ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে তার কাছে আসছে। হাসপাতালগুলোর চিত্রও একই।
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রচণ্ড গরম অনুভূত হয়। আবার মধ্যরাত থেকে ভোর বেলা পর্যন্ত প্রচুর শীত আর ঠাণ্ডা অনুভূত হয়। ফলে কম্বল ও চাঁদর গায়ে দিতে হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন, বায়ুমণ্ডলের তাপঘনত্ব বৃদ্ধি এবং অসময়ের বৃষ্টিপাতই এই অস্বাভাবিক আবহাওয়ার মূল কারণ।
জানা গেছে, গত কয়েক বছরে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে এই অঞ্চলে গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ৪ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তীব্র উষ্ণতার কারণে কৃষি, প্রাণী ও মৎস্য খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সাধারণত এই সময় শীতের আমেজ থাকলেও এখন দিনের বেলা প্রচণ্ড গরম ও রাতে হালকা শীত অনুভূত হচ্ছে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উত্তরাঞ্চলের স্থলভাগে তাপপ্রবাহের ঘনত্ব বাড়ছে। এতে খরার প্রবণতা দেখা দিচ্ছে এবং শীতকালের সময়কাল ক্রমেই কমে যাচ্ছে।
রংপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের অক্টোবরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২১ থেকে ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি অক্টোবরের শেষভাগে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। অপরদিকে একই সময়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩১-৩২ ডিগ্রি থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৫-৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণও বেড়েছে, যা আবহাওয়াবিদদের মতে অসময়ের বৃষ্টি।
বর্তমানে রংপুর অঞ্চলে গভীর রাত থেকে সকাল পর্যন্ত শিশিরবিন্দুর সঙ্গে হালকা শীতের আমেজ থাকলেও মধ্যদুপুর থেকে রাত পর্যন্ত প্রচণ্ড গরমে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে।
আবহাওয়া অফিস জানায়, শুক্রবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩.৫ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ ৩৩ ও সর্বনিম্ন ২৩ ডিগ্রি, আর মঙ্গলবার বিকেলে সর্বোচ্চ ছিল ৩৩ এবং সর্বনিম্ন ২২.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
কালীগঞ্জ উপজেলা কাকিনা চাপাতলা এলাকার কৃষক আহেদুল ইসলাম জানান, এখন কার্তিক মাস চলছ। তবুও গরম অনুভূত হচ্ছে। বুঝতেই পারতেছি না গ্রীষ্মকাল নাকি শীতকাল। ভোর রাত থেকে কিছুটা শীত অনুভূত হলেও সকাল থেকে গরমের তীব্রতা বেড়ে যায়। অসহ্য গরমে ফ্যান চালাতে হয় গভীর রাত পর্যন্ত।
কৃষিবিদদের মতে, প্রকৃতির এমন আচরণে কৃষি ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বর্তমানে মাঠে রয়েছে শীতকালীন শাকসবজি, আমন ধান ও আগাম আলুর চাষ। তাপমাত্রা বেশি থাকার কারণে কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া নাও যেতে পারে।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে এই অঞ্চলের জীববৈচিত্র্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে। অনেক প্রাণী বিলুপ্তির মুখে পড়বে এবং উত্তরাঞ্চল দ্রুত মরুকরণের দিকে এগিয়ে যাবে।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান বলেন, গত কয়েক বছরে রংপুর অঞ্চলে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৩ থেকে ৪ ডিগ্রি বেড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও বিভিন্ন পরিবেশগত কারণে এমন আবহাওয়ার পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই