বগুড়ায় আগাম শীতকালীন সবজি চাষে ভালো দাম পাওয়ার স্বপ্ন বুনছেন স্থানীয় কৃষকরা। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা। মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সবজি। শীত না পড়লেও চাষিরা বসে নেই। তবে শরতের বৃষ্টির প্রভাব থাকায় এবার আগাম শীতকালীন বা খরিপ-২ মৌসুমের ফসল চাষ কিছুটা বিঘ্নিত হয়েছে। অল্প সময়ে কম খরচে ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, টমেটো, শিম, মুলা, পালং শাকসহ শীতকালীন বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করে লাভবান হওয়ার আশায় জমিতেই সময় পার করছেন তারা।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বগুড়ায় এবারো ভালো সবজির উৎপাদন হবে। চলতি মৌসুমে জেলায় আগাম শীতকালিন সবজি চাষের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমি। এ পর্যন্ত চাষ হয়েছে ২ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে। অক্টোবরের শেষের দিকে লক্ষ্যমাত্র ছাড়িয়ে যাবে। গত বছরও ২ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে আগাম শীতকালীন সবজি চাষ হয়েছে। এবার প্রতি কেজি সবজির উৎপাদন খরচ ধরা হয়েছে ২৭-২৯ টাকা। হেক্টর প্রতি ফলন ধরা হয়েছে সাড়ে ১৭ মেট্রিকটন। প্রতি কেজি সবজির গড় মূল্য ৪০ থেকে ৪৫ টাকা ধরলে এবার জেলায় দেড়শ কোটি টাকার বেশি শীতকালীন সবজি উৎপাদন হবে।
বগুড়া সদর, শিবগঞ্জ, শাজাহানপুর, শেরপুর, ধুনট, নন্দীগ্রাম, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, গাবতলী ও কাহালুসহ অন্যান্য উপজেলায় আগাম সবজির চাষ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাম্পার ফলন হবে। এছাড়া আগাম শীতকালীন সবজির মধ্যে পালংশাক, মুলা, গাঁজর ও শিম বাজারে বিক্রি শুরু হয়েছে।
জানা যায়, বগুড়াকে সবজি ভান্ডার বলা হয়ে থাকে। শীতকালীন সবজি প্রচুর পরিমাণে চাষ হয়ে থাকে এই জেলায়। শীত আসার আগে স্থানীয় চাষিরা আগামজাতের সবজি চাষ করে থাকেন। আগামজাতের সবজিতে বেশি লাভবান হওয়া যায় বলে চাষিরা বেশি আগ্রহী হয়ে পড়েছেন। জেলায় এখনো শীত মৌসুম শুরু না হলেও শীতের সবজি চাষ শুরু হয়েছে। জেলার উঁচু জমিতে শীতকালীন বিভিন্ন জাতের সবজির চারা রোপণ ও পরিচর্যায় কৃষক পরিবারগুলোতে ব্যস্ততা বেড়েছে। কাক ডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে তারা জমিতে হাল চাষ, চারা রোপণ, ক্ষেতে পানি ও ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করাসহ নানা কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবার কেউ ক্ষেত থেকে সবজি তুলে বিক্রির জন্য বাজারে নিচ্ছেন। অনেকে নতুন করে শীতকালীন সবজির চারা রোপণেও ব্যস্ত। বাণিজ্যিকভাবেও চাষ হচ্ছে এসব সবজি। সবুজে সবুজে ভরে উঠছে মাঠ। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন শোভা পাচ্ছে সারি সারি বিভিন্ন জাতের সবজির গাছ। এসবের মধ্যে শোভা পাচ্ছে ফুলকপি, বাঁধাকপির চারা, লাউ, শিম, মুলা, পালং ও লালশাকসহ হরেক রকমের শীতকালীন সবজি। কৃষকদের সবজি চাষে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা। সবজি চাষে যুক্ত জেলার কৃষকেরা এবার বেশ উৎফুল্ল। কারণ তারা এবার উৎপাদিত ফসলের ফলন ও দাম বেশ ভালো পাবেন। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়মিত মনিটরিংয়ে আধুনিক পদ্ধতির ব্যবহার বেড়েছে। আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে উৎপাদন বাড়ায় কৃষকদের মুনাফাও বেড়েছে কয়েকগুণ।
স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, আবহাওয়া কিছুটা বৈরি হওয়ায় এবার আগাম শীতকালীন সবজি চাষে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। তারপরেও স্বল্প সময়ে শীতকালীন সবজির আগাম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন তারা। প্রতি বিঘায় সবজি উৎপাদনে যে খরচ, মাঠ থেকেই তা প্রায় দ্বিগুণ দামেই বিক্রি হয়। আর স্বল্প সময়েই বাজারজাত করা যায় বলে এসব সবজি চাষে ঝুঁকেছেন তারা।
বগুড়া সদরের পীরগাছা এলাকার কৃষক আমিনুর প্রামানিক জানান, সারা বছরই তিনি বিভিন্ন জাতের সবজি উৎপাদন করে থাকেন। আগাম শীতকালিন সবজির মধ্যে-ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, মুলা, পালংশাক ও ধনেপাতার আবাদ করেছেন। বাজারে প্রতিটি সবজিরই ব্যাপক চাহিদার সাথে দামও ভালো পাওয়া যায়। তবে এবার বৃষ্টি বেশি। অনেক কৃষকের আবাদ নষ্ট হয়েছে। তারা আবার নতুন করে চাষ শুরু করেছেন।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান ফরিদ জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় আগাম শীতকালীন সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমি। এ পর্যন্ত চাষ হয়েছে ২ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে। গত বছরের তুলনায় এবার শরৎকালে বৃষ্টি কিছুটা বেশি। এতে খরিপ-২ মৌসুমে সবজি চাষাবাদে কিছুটা বিঘ্ন ঘটলেও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রায় কোনো প্রভাব ফেলবে না। তিনি বলেন, আগাম জাতের সবজি চাষে অর্থনৈতিকভাবেও স্বাবলম্বী হচ্ছেন কৃষকরা। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের বিভিন্ন সময় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই