দক্ষিণ কোরিয়ার সাহিত্য জগতে এক আলোচিত নাম বেক সে-হি শুক্রবার মাত্র ৩৫ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতি পেয়েছিলেন তার আত্মজৈবিক গ্রন্থ ‘আই ওয়ান্ট টু ডাই বাট আই ওয়ান্ট টু ইট টটবক্কি’ দিয়ে, যা বিষণ্নতার সঙ্গে লড়াইয়ের সরল অথচ সংবেদনশীল গল্প বলেছে।
কোরিয়া অর্গান অ্যান্ড টিস্যু ডোনেশান এজেন্সি নিশ্চিত করেছে, বেক তাঁর হৃদ্যন্ত্র, ফুসফুস, লিভার ও দুই কিডনি দান করেছেন, যা পাঁচজনের জীবন বাঁচিয়েছে। তবে মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কারণ প্রকাশ করা হয়নি। সংস্থার পরিচালক লি সাম ইয়ল এক বিবৃতিতে বলেন, “জীবনের শেষ মুহূর্তেও বেক যে ভালোবাসা ও আশার বার্তা ছড়িয়েছেন, তা অন্যদের জীবনে নতুন আলো জ্বালিয়েছে।”
ছোট বোন বেক দা-হি এক আবেগপূর্ণ বার্তায় বলেন, “আমার বোন সবসময় লেখার মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে পৌঁছাতে চেয়েছিল। সে কাউকে ঘৃণা করতে পারত না। আশা করি, এখন সে শান্তিতে থাকবে। আমি তোমায় ভীষণ ভালোবাসি।”
বেক ১৯৯০ সালে গিয়ংগি প্রদেশের গোইয়াং শহরে জন্মগ্রহণ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে সৃজনশীল লেখালেখি নিয়ে পড়াশোনা শেষে একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে পাঁচ বছর কাজ করেন। এই সময়েই তার মধ্যে ‘ডিসথাইমিয়া’ নামে দীর্ঘস্থায়ী বিষণ্নতা ধরা পড়ে। প্রায় এক দশক ধরে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেন, যা পরবর্তীতে তার বইয়ের মূল উপাদান হিসেবে প্রমাণিত হয়।
২০১৮ সালে বেক নিজ উদ্যোগে প্রকাশ করেন ‘আই ওয়ান্ট টু ডাই বাট আই ওয়ান্ট টু ইট টটবক্কি’, পরবর্তীতে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মুনহাকদংনে বইটি গ্রহণ করে। বইটি দ্রুত দেশজুড়ে আলোড়ন তোলে এবং ২০২২ সালে ইংরেজি অনুবাদের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে সাড়া ফেলে। বইটি এখন পর্যন্ত ২৫টিরও বেশি ভাষায় অনূদিত এবং বিক্রি হয়েছে ২০ লাখেরও বেশি কপি।
‘টটবক্কি’ হলো কোরীয় জনপ্রিয় খাবার, যা চালের কেক দিয়ে তৈরি এবং মশলাদার, ঝাল ও মিষ্টি স্বাদের। বইটির শিরোনামই প্রতিফলিত করে জীবনের দ্বৈত টানাপোড়েন—মৃত্যুচিন্তার অন্ধকারের মাঝেও বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা। ২০২৪ সালে এক সাক্ষাৎকারে বেক বলেন, “আমি নিজের মৃত্যু পরিকল্পনা করছিলাম, কিন্তু হঠাৎ ক্ষুধা পেলাম, তাই টটবক্কি খেয়ে ফেললাম।”
বেকের লেখার সরল অথচ সংবেদনশীল ভাষা দক্ষিণ কোরিয়ার তরুণদের কাছে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে নতুন দিশা দেখিয়েছে। তার দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালে ‘আই ওয়ান্ট টু ডাই বাট আই স্টিল ওয়ান্ট টু ইট টটবক্কি’।
বেক সে-হি আধুনিক দক্ষিণ কোরিয়ার নারীদের এক প্রজন্মের প্রতিনিধি ছিলেন, যারা আত্মস্বীকারোক্তিমূলক লেখার মাধ্যমে উদ্বেগ, ক্লান্তি ও আত্ম সন্দেহকে ভাষা দিয়েছেন। তিনি নিঃশব্দে বলতেন, “আমি বুঝি তোমার কষ্ট।”
বিডি প্রতিদিন/আশিক