ঘুমচোখ খুলেই কী করেন? বেশিরভাগই বলবেন, ঘুম ভাঙলেই আগে মোবাইলে চোখ রাখি। বিছানায় আলস্য ভরে শুয়ে শুয়েই মুঠোফোনে ঘাঁটাঘাঁটি করি অনেকক্ষণ। তারপর গরম চা বা কফিতে লম্বা চুমুক দিয়েই দৈনন্দিন জীবনের তাড়াহুড়ো শুরু হয়। কেউ শরীরচর্চা করেন, আবার কেউ করেন না। কেউ আবার সকালের নাস্তা ঠিকমতো না করেই বেরিয়ে পড়েন। এরপর বাইরে গিয়ে রাস্তা থেকে শিঙাড়া, কিংবা ভাজাপোড়া খেয়ে পেট ভরিয়ে ফেলেন। কাজের জায়গায় গিয়ে ফের কাপের পর কাপ চা বা কফি চলে দিনভর।
কিন্তু এসব সঠিক অভ্যাস নয়। চিকিৎকদের মতে, ঘুম থেকে উঠে এমন কিছু কাজ আমরা প্রতিদিন করে থাকি, যা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো নয়। উৎসাহ ও উদ্দীপনাকে অনেক কমিয়ে দেয় এই সব অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস। ফলে রাতে ভালো ঘুম হলেও, সকালে তরতাজা লাগে না। কাজেও ঠিক মতো মন বসে না।
তা হলে চলুন জেনে নেই, ঘুম থেকে ওঠার পর পরই ঠিক কোন কোন কাজ আমাদের করা উচিত নয়।
ঘুম চোখ খুলেই মুঠোফোন হাতড়ান?
এই অভ্যাস আমাদের অনেকেরই আছে। ঘুম চোখ খুলেই মোবাইল ঘাঁটতে শুরু করলে সবচেয়ে আগে চোখে তার প্রভাব পড়বে। সারা রাত চোখ বিশ্রাম পাওয়ার পর পরই যদি মোবাইলের নিল আলো চোখে পড়ে, তা হলে চোখের আর্দ্রতা নষ্ট হয়ে যাবে। দেখবেন, কিছুক্ষণ মোবাইলে চোখ রাখলেই চোখ জ্বালা করতে থাকবে, জল পড়বে, চুলকানি হবে। তাছাড়া এই অভ্যাস ‘স্ট্রেস হরমোন’-এর ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয় দিনের শুরুতেই। তরতাজা ভাবটাই নষ্ট হয়ে যায়। আরও বেশি আলস্য চেপে ধরে। সকাল সকাল কাজের উৎসাহই হারিয়ে যায়।
হুড়োহুড়ি করে বিছানা থেকে নামেন?
ঘুম ভাঙার পর তাড়াহুড়ো করে বিছানা ছেড়ে মাটিতে নেমে পড়েন অনেকে। চিকিৎসকদের মতে, ঘুম ভাঙলেই হুড়োহুড়ি করে উঠবেন না। ধীরে ধীরে পাশ ফিরে উঠতে হবে। মিনিট দুই-তিনেক বিছানায় বসে থাকুন। তারপর পা রাখুন মাটিতে। আগে এক পা মাটিতে রাখুন, তারপর অন্য পা। ঘুমের সময়ে আমাদের হৃৎস্পন্দনের হার কম থাকে, রক্ত সঞ্চালনও ধীর গতিতে হয়। তাই জেগে ওঠার পর শরীরকে সেই অবস্থার সঙ্গে আগে মানাতে হবে। হঠাৎ করে বিছানা থেকে নেমে হাঁটাচলা শুরু করে দিলে আচমকা রক্তচাপ কমে যেতে পারে, মাথা ঘুরে পড়েও যেতে পারেন।
ঘুম থেকে উঠেই চা বা কফি খাবেন না
সকালে উঠেই এক কাপ ধোঁয়া ওঠা চায়ের সঙ্গে দিন শুরু করতে না পারলে গোটা দিনটাই যেন ঠিকঠাক হয় না। অনেকে দিন শুরু করেন চায়ের পেয়ালা নিয়েই। এখন তো আবার অনেকে কফিও খান। চা বা কফিতে বেশি মাত্রায় ক্যাফেইন থাকে। সকালে খালি পেটে ক্যাফেইন শরীরে ঢুকলে তা হজমের প্রক্রিয়াকে বিগড়ে দিতে পারে। এতে গ্যাস-অম্বলের সমস্যা বাড়ে। তাছাড়া দুধ ও চিনি দেওয়া চা বা কফি খেলে শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা বাড়ে। যা কিডনি রোগীদের জন্য বিশেষভাবে ক্ষতিকর।
ব্রাশ করেন তো?
ঘুম থেকে উঠেই ব্রাশ না করে প্রাত্যহিক কাজ শুরু করেন অনেকে। মুখ না ধুয়েই চা বা কফি খেয়ে নেন। এতে কিন্তু দাঁতের এনামেল নষ্ট হয়ে যায়। মুখের দুর্গন্ধ, ক্যাভিটি ও দাঁতের অন্যান্য রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
না খেয়েই বেরিয়ে পড়া
অনেকেই আছেন যারা সকাল থেকেই তাড়াহুড়ো শুরু করেন। কারণ সঠিক পরিকল্পনা থাকায়, কোন কাজ আগে আর কোনটি পরে করবেন, সেই খেয়াল থাকে না। ফলে কাজেও দেরি হয়। আর তার ফলে সময় বাঁচাতে নাস্তা না খেয়েই বেরিয়ে পড়তে হয়। পুষ্টিবিদরা বলছেন, সারা দিনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আহার হলো সকালের নাস্তা। সকালে কিছু না খেলে ওজন বাড়তে থাকে। দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকার পরে খাবার খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। সকালে না খাওয়ার অভ্যাস টাইপ ২ ডায়াবিটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। তাছাড়া হজমের সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
বিডি প্রতিদিন/কেএ