স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার বছর না পেরোতেই আবার পানিতে ডুবেছে ফেনী। অপরদিকে নোয়াখালীতে গত ২৪ ঘণ্টার বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে অতিবৃষ্টি ও নদীর জোয়ারের পানির চাপে সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে গভীর খালে পরিণত হয়েছে। এদিকে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আতঙ্ক বিরাজ করছে দিনাজপুরের ১১০টি চরের মানুষের মধ্যে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
ফেনী : টানা বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফেনীর পাঁচটি উপজেলার বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল ও নদীতীরবর্তী এলাকা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদন অনুযায়ী বন্যাদুর্গত এলাকায় এবার কৃষি, সড়ক যোগাযোগ, মৎস্য, প্রাণিসম্পদসহ অন্যান্য খাতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৩৮ কোটি টাকার বেশি। জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, এবারের বন্যায় কৃষি খাতে ক্ষতির পরিমাণ ৭৫ কোটি টাকা। প্রাণিসম্পদ খাতে ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ ১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এলজিইডি ও সড়ক বিভাগ জানায়, অবকাঠামোগত খাতে ক্ষতির পরিমাণ ৮২ কোটি টাকা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, জেলায় বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ৫৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। শিক্ষা খাতে ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ৩৬ লাখ টাকা। এ ছাড়া স্বাস্থ্য খাতে ক্ষতির পরিমাণ ১৭ লাখ টাকা। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ক্ষতির পরিমাণ ১৪ কোটি টাকা। বন বিভাগের ক্ষতির পরিমাণ ১৯ লাখ টাকা। বিদ্যুৎ বিভাগে ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ৪৪ লাখ টাকা। ফেনী জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মাহবুব আলম বলেন, সব ধরনের ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ির জন্য বরাদ্দ এলে পুনর্গঠন কার্যক্রম শুরু হবে। ২০২৪-এর আগস্টে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে ফেনী। এ বন্যার ভয়াবহতা ছাড়িয়ে গেছে অতীতের সব ইতিহাস। প্রাণ হারিয়েছিল ২৯ জন। এ ছাড়া বন্যায় বিভিন্ন খাতেই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।
নোয়াখালী : গত ২৪ ঘণ্টায় নোয়াখালীতে মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। এতে জেলা শহর, মাইজদী প্রেস ক্লাব সড়ক, টাউন হল মোড়, ইসলামিয়া সড়ক, ডিসি সড়ক, মহিলা কলেজ সড়ক, জেল খানা সড়ক, মাইজদী বাজার সড়কসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে চলাচলে চরম দুর্ভোগে পড়েন মানুষ। এদিকে কোম্পানীগঞ্জের, বেগমগঞ্জ, কবিরহাট, সুবর্ণচর ও সেনবাগ উপজেলায়ও জলাবদ্ধতার খবর পাওয়া গেছে।
গতকাল জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, প্রধান সড়কগুলোতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়নি। তবে পাশের কিছু সড়ক পানিতে ডুবে গেছে।
লক্ষ্মীপুর : কমলনগর উপজেলার বলিরপোল-নাছিরগঞ্জ সড়ক অতিবৃষ্টি এবং মেঘনা নদীর জোয়ারের পানির চাপে বিচ্ছিন্ন হয়ে গভীর খালে পরিণত হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন দুই ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার মানুষ। পাশের খেতের কোমর পানি মাড়িয়ে চলাচল করতে হচ্ছে তাদের। এ ছাড়া একই কারণে উপজেলার চরমার্টিন ও চরকালকিনিসহ বিভিন্ন এলাকায় কাঁচা সড়কগুলো ক্ষতবিক্ষত হয়ে চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। গতকাল বিকালে উপজেলার চরমার্টিন গ্রামে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা যায়।
জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার বলেন, সড়ক বিচ্ছিন্নের খবর পেয়ে এলজিআইডির নির্বাহী প্রকৌশলীকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
লালমনিরহাট : উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে আতঙ্ক ছড়িয়েছে তিস্তা ও ধরলা নদীসংলগ্ন ১১০টি চরের মানুষের মধ্যে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তলিয়ে যেতে শুরু করেছে নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের ফসলের খেত। ইতোমধ্যেই বেশ কিছু ঘরবাড়িতে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে চরের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
গতকাল সন্ধ্যা ৭টা থেকে তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে তিস্তার পানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে দেশের সবচেয়ে বড় সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্প বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, আমরা সতর্ক আছি। আমরা চরের মানুষগুলোকে সতর্ক থাকতে বলেছি।