চলতি বছরের (২০২৫) সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় সুপার টাইফুন রাগাসা ফিলিপাইনের উত্তরাঞ্চলে ভয়াবহ বাতাস ও মুষলধারে বৃষ্টি নিয়ে আছড়ে পড়েছে। ফলে হাজার হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। হংকং, তাইওয়ান এবং চীনের দক্ষিণাঞ্চলে জরুরি সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
ফিলিপাইনের আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছে, সোমবার স্থানীয় সময় সকালে টাইফুন রাগাসা দেশটির কাগায়ান প্রদেশের পানুইতান দ্বীপে আঘাত হানে। এ সময় ঝড়ের বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৬৭ কিলোমিটার (১৬৫ মাইল) যা ক্যাটাগরি-৫ হারিকেনের সমান।
ধারণা করা হচ্ছে, এই ঝড়ে কয়েক কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এটি ফিলিপাইনের বিভিন্ন অংশ অতিক্রম করে হংকং, ম্যাকাও এবং চীনের গুয়াংডং প্রদেশের মতো জনবহুল শহরগুলোর দিকে এগিয়ে যাবে।
ঝড়ের প্রভাবে ফিলিপাইনের উত্তরাঞ্চলীয় লুজন দ্বীপে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যেখানে কিছু কিছু অঞ্চলে প্রায় ৪০০ মিলিমিটার (১৫ ইঞ্চি) পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে। বাতানেস ও বাবুয়ান দ্বীপপুঞ্জ, পূর্ব তাইওয়ান, এবং পরে দক্ষিণ চীন ও ভিয়েতনামের উপকূলীয় অঞ্চলে ১০ ফুট বা তার বেশি উঁচু ঢেউ দেখা দিতে পারে।
ফিলিপাইনের আবহাওয়া বিভাগ বাবুয়ান দ্বীপপুঞ্জে সর্বোচ্চ 'ট্রপিক্যাল সাইক্লোন উইন্ড সিগন্যাল নম্বর ৫' জারি করে বাসিন্দাদের প্রাণঘাতী জলোচ্ছ্বাস সম্পর্কে সতর্ক করেছে। দেশটির স্বরাষ্ট্র ও স্থানীয় সরকার বিভাগ জানিয়েছে, উত্তর ও মধ্যাঞ্চলীয় লুজন থেকে ১০ হাজারের বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ফিলিপাইনের রাষ্ট্রপতি ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র মেগা সিটি মেট্রো ম্যানিলা এবং লুজনের ২৯টি প্রদেশে সরকারি অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছেন। টাইফুন রাগাসার প্রভাবে ক্যালিয়ান দ্বীপ এবং আপায়াও প্রদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, রাগাসা বুধবার হংকংয়ের দক্ষিণে পৌঁছাতে পারে। এ সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ২০০ কিলোমিটার (১২৪ মাইল) এবং দমকা হাওয়া ঘণ্টায় ২৫০ কিলোমিটার (১৫৫ মাইল) পর্যন্ত হতে পারে, যা ক্যাটাগরি-৩ হারিকেনের সমান।
চীনের শেনজেন শহরে কর্মকর্তারা উপকূলীয় অঞ্চল থেকে ৪ লাখ মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গুয়াংডং প্রদেশেও মঙ্গলবার থেকে ট্রেন চলাচল ধীরে ধীরে বন্ধ করে দেওয়া হবে।
তাইওয়ান কর্তৃপক্ষ সমুদ্র এবং স্থল উভয় ক্ষেত্রেই সতর্কতা জারি করেছে, ফেরি পরিষেবা এবং কিছু প্রাকৃতিক ভ্রমণপথ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
হংকং সরকার বন্যা, ভূমিধস এবং গাছ ভেঙে পড়ার মতো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়েছে। শহরের সব স্কুল মঙ্গলবার থেকে বুধবার পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। ক্যাথে প্যাসিফিক এয়ারওয়েজ এবং হংকং এয়ারলাইন্সের মতো প্রধান বিমান সংস্থাগুলো মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হংকং থেকে ছেড়ে যাওয়া ও পৌঁছানো শত শত ফ্লাইট বাতিল করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর পৃথিবীর সবচেয়ে সক্রিয় ট্রপিক্যাল অঞ্চল এবং সেপ্টেম্বর মাস সাধারণত সবচেয়ে ব্যস্ত সময়। মানব-সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ঝড়গুলো আরও শক্তিশালী হচ্ছে। সুপার টাইফুন রাগাসার মতো ঝড়ের দ্রুত তীব্রতা বৃদ্ধি জলবায়ু পরিবর্তনের একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত।
সূত্র: সিএনএন
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল