জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে অধূমপায়ীদের রক্ষা করতে সমাজসেবা অধিদপ্তর কার্যালয়কে সম্পূর্ণ ধূমপানমুক্ত এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। এখন থেকে তামাক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত জাতীয় নির্দেশিকা অনুসরণ করে ধূমপানমুক্ত এলাকা হিসেবে এই অধিদপ্তরের সব কার্যক্রম পরিচালিত হবে বলে জানানো হয়েছে।
সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তর কার্যালয়ে নারী মৈত্রীর আয়োজনে অনুষ্ঠিত ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণ ও সমাজসেবা অধিদপ্তরকে তামাকমুক্ত ঘোষণা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
ঘোষণায় জানানো হয়, সমাজসেবা অধিদপ্তর কার্যালয়ের অভ্যন্তরে যেকোনো ধরনের তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয় ও ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।
যাতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আগত অতিথিদের কেউই পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাবের শিকার না হন। পাশাপাশি তামাক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত জাতীয় নির্দেশিকা অনুসরণ করে সম্পূর্ণ ধূমপানমুক্ত এলাকা হিসেবে এই অধিদপ্তরের সব কার্যক্রম পরিচালিত হবে বলে তারা জানান।
সভায় জানানো হয়, বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০৫ (সংশোধিত ২০১৩) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল এফসিটিসি-এর সঙ্গে অধিকতর সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ বেশ কিছু সংশোধনীর প্রস্তাব করে। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনাগুলো হলো পাবলিক প্লেসে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বা স্মোকিং জোন নিষিদ্ধ করা, সব ধরনের তামাকজাত পণ্যের প্রদর্শন ও বিজ্ঞাপন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেটের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে তরুণ-তরুণীদের রক্ষা করা, বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রি বন্ধ করা, তামাক কম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি বা সিএসআর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা এবং তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কের সচিত্র সতর্কবার্তা বৃদ্ধি করে শতকরা ৯০ ভাগ করা ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান খান অধিদপ্তরকে তামাকমুক্ত ঘোষণা করে বলেন, ধূমপানের কারণে যে শুধু ধূমপায়ীই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা নয় বরং পাশে থাকা অধূমপায়ীরাও সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অধূমপায়ীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাকমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। সমাজসেব অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আগত অতিথিদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় দায়বদ্ধ; এই দায়বদ্ধতা থেকেই আমরা এই অধিদপ্তরকে ধূমপানমুক্ত ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ভবিষ্যতে এটি আরো বিস্তৃত আকারে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নারী মৈত্রী মাদার্স ফোরাম এগেইনস্ট টোব্যাকো এর আহ্ববায়ক ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব শিবানী ভট্টাচার্য বলেন, তামাকমুক্ত কার্যালয় ঘোষণা করার মধ্য দিয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তর যে উদাহরণ সৃষ্টি করল, আশা করি দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের জন্য এটি অনুপ্রেরণা হয়ে উঠবে। এই ধূমপানমুক্ত ঘোষণার মাধ্যমে একটি বড় সামাজিক পরিবর্তনের শুরু হতে পারে। আমরা আশা করি, এটি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছড়িয়ে পড়বে এবং ভবিষ্যতে একটি তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার পথকে ত্বরান্বিত করবে।’
সভাপতির বক্তব্যে নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলি বলেন, ২০০৪ সালে বাংলাদেশ প্রথম দেশ হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)-এ স্বাক্ষর করে এবং ২০০৮ সালে এর ৫.৩ ধারা বাস্তবায়নের গাইডলাইনেও সম্মতি দেয়। এই ধারায় বলা হয়েছে, তামাক কোম্পানির ব্যবসায়িক স্বার্থ থেকে নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণভাবে আলাদা রাখতে হবে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে তামাক কোম্পানিগুলো এই কমিটিকে নানাভাবে প্রভাবিত করে এই প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করছে। সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড তামাক কোম্পানির সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্তও নিয়েছে। জনস্বাস্থ্য রক্ষার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করে দ্রুত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী পাস করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
তিনি সমাজসেবা অধিদপ্তরকে তামাকমুক্ত ঘোষণা করায় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এ ছাড়া সভায় উপস্থিত ছিলেন নারী মৈত্রী টিচার্স ফোরাম এগেইনস্ট টোব্যাকে-এর আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের শিক্ষক অধ্যাপক ড. খালেদা ইসলাম, নারী মৈত্রী টিচার্স ফোরাম এগেইনস্ট টোব্যাকে এর সহ-আহ্বায়ক ও শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তনুশ্রী হালদার এবং সমাজসেবা অধিদপ্তরের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল