শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে কালো তালিকাভুক্ত ১৬ প্রতিষ্ঠান। চোরাচালান ও নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তি বাতিল করার পরই এসব প্রতিষ্ঠান তৎপর হয়ে পড়েছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্ণধার শমী কায়সার, অভিনেতা মাহফুজ আহমেদ, আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ নাইমসহ আরও বেশ কয়েকজনকে বিমানবন্দরে বিপজ্জনক বলে উল্লেখ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, পতিত সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার ছত্রছায়ায় চলত এসব প্রতিষ্ঠান। এ পরিস্থিতিতে শাহজালাল বিমানবন্দরে কর্মরত প্রতিটি সংস্থাকে অ্যালার্ট রাখা হয়েছে।
সিভিল এভিয়েশন সূত্র জানায়, গত ১ জুলাই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও অভ্যন্তরীণ টার্মিনালের যেসব দোকান বাতিল করা হয়, সেগুলো হচ্ছে- এরোস ট্রেডিং, মেসার্স সজল এন্টারপ্রাইজ, মাহবুবা ট্রেডার্স, নাহার কনস্ট্রাকশন, এভিয়েশন ট্রান্সপোর্ট লিমিটেড, এ ফাইভ রোডওয়ে লিমিটেড, ওয়ার্ল্ড ট্রাস্ট ট্যুরিস্ট কার সার্ভিসেস কোম্পানি, শিরিন এন্টারপ্রাইজ, হাওলাদার অ্যান্ড সন্স, অথৈ এন্টারপ্রাইজ, ওল্ফ করপোরেশন, আড়িয়াল ক্রিয়েটিভ স্পেস, ধানসিঁড়ি কমিউনিকেশন এবং ডিপার্টমেন্ট এস কনসালটিং।
এ ছাড়া চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের যাত্রী প্রান্তিক ভবনের দ্বিতীয় তলার বহির্গমন এলাকায় অবস্থিত ফ্যালকন এজেন্সি এবং নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ বহির্গমন এলাকায় থাকা ফ্যালকনও বাতিল কর হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকানা ছিল আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীদের। নেপথ্যে ছিলেন শেখ রেহানা।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার প্রভাব খাটিয়ে দুটি লাউঞ্জ ভাড়া নেন ধানসিঁড়ির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শমী কায়সার। তিনি প্রতি মাসে যে পরিমাণ বেবিচককে ভাড়া দিতেন তার দ্বিগুণ ভাড়া নিতেন সিটি ব্যাংকের কাছ থেকে। প্রতিবেদনে বলা হয়, তার বিরুদ্ধে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগ রয়েছে। তার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিমানবন্দরে নাশকতামূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করার আশঙ্কা রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সদস্য ছিলেন সৈয়দ নাইম। প্রভাব খাটিয়ে সিভিল এভিয়েশন থেকে বাগিয়ে নেন ছয়টি প্রতিষ্ঠান। বিগত ১৫ বছর ধরে এই নাইম বিমানবন্দরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। চোরাচালানসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন নাইম। তার খাবারের দোকানগুলোতে কয়েকগুণ বেশি মূল্য রাখার অভিযোগও দীর্ঘ দিনের।
জানা গেছে, বিগত ৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বেবিচকের (সদস্য পরি ও অপারেশান) হিসেবে দায়িত্ব নেন এয়ার কমোডর আবু সাঈদ মেহবুব খান। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন এবং মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেন তিনি। চুক্তি বাতিল করার পরই বিপাকে পড়ে বেবিচক। প্রতিষ্ঠানগুলো দিশাহারা হয়ে পড়ে। প্রতিষ্ঠানগুলোর টার্গেট- যে কোনো মূল্যে বেবিচক-এর সদস্য অপারেশন এয়ার কমোডর আবু সাঈদ খানকে অপসারণ করে তাদের দোকানগুলো ফিরে পাওয়া। তাদের ধারণা, তাকে সরাতে পারলেই দোকান ফিরে পেতে আর কোনো বাধা থাকবে না।
জানতে চাইলে বেবিচক জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহাম্মদ কাওসার মাহমুদ খান বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোর বরাদ্দ বাতিল হওয়ার পর থেকে যেভাবে মিডিয়ায় বেবিচক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও তাদের চরিত্র হনন করা হচ্ছে তা কিছুতেই কাম্য নয়। অবিশ্বাস্য কায়দায় এমন সব মিথ্যাচার করা হচ্ছে যার কোনো ভিত্তি না থাকলেও বেবিচকের ভাবমূর্তিকে ধ্বংস করা হচ্ছে।