চেয়ার নেই টেবিল নেই আছে বিশাল হৃদয়, বাহারি কোনো সজ্জা না থাকলেও আছে অবারিত ফুটপাত আছে মাথার ওপর খোলা আকাশ। বলা হচ্ছে ভালো কাজের হোটেলের কথা। রাজধানী ঢাকাসহ চট্টগ্রাম ও কুড়িগ্রামের ১৪টি স্থানে চলছে ভালো কাজের হোটেলের কার্যক্রম। একটি ভালো কাজের বিনিময়ে দুপুর এবং রাতের খাবার খেতে জড়ো হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। এমনই একজন দিনমজুর মন্টু মিয়া। তার মতো আরও অনেকেই এসেছেন মগবাজার শাখায় ভালো কাজের বিনিময়ে খাবার খেতে। মন্টু মিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আজকে একটা না দুটা ভালো কাজ করছি। কাওরান বাজারে একজন অন্ধ লোককে রাস্তা পার কইরা দিছি। এর আগে সকালবেলা একজন বৃদ্ধ মানুষকে বাজারে সাহায্য করছি। এখন আসছি দুপুরের খাবার খাইতে। ভালো কাজ করলেই এরা খাইতে দেয়।’
পথচারী রফিক আজাদ কাজ করেন বিজি প্রেসে। তিনি বলেন, এখানে প্রতিদিন অনেক মানুষ খেতে আসে। এমন মহৎ উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। বিনামূল্যে ভালো কাজের বিনিময়ে খাবারের এই উদ্যোগ বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে সাধারণ মানুষের কাছে। এই হোটেলে খাবার খেতে হলে আপনাকে দিতে হবে না কোনো টাকা। কিন্তু আপনাকে অন্তত একটি ভালো কাজ করতে হবে। ২০১৯ সালে রাজধানীর কমলাপুরে চালু হয় এই ভালো কাজের হোটেল। ১৪টি স্পটের ফুটপাতে খাবার খেতে পারছে প্রতিদিন প্রায় ৪ হাজার মানুষ। তেজগাঁও সাতরাস্তা, কাওরান বাজার, মিরপুর, বনানী কড়াইল বস্তি, ওয়ারী, খিলগাঁও, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডিতে রবীন্দ্র সরোবর, সদরঘাট, কদমতলা বাসাবো, চট্টগ্রাম কাজীরদৌড়ি, চট্টগ্রাম চকবাজার এবং কুড়িগ্রাম শাখায় প্রতিদিন খেতে পারছেন অভুক্ত মানুষ। এসব জায়গায় ফুটপাতে দেয়ালে লাল রঙে বড় করে লেখা ভালো কাজের হোটেল।
এর সামনেই খোলা আকাশের নিচে একটি করে ভালো কাজের বিনিময়ে অসহায় দুস্থ পথচারী দিনমজুরের মাঝে খাবার বিতরণ করে আসছে একদল তরুণ উদ্যোক্তা। মগবাজার শাখার সিনিয়র ভলেন্টিয়ার রুবেল আহমেদ জানালেন এখন তাদের সদস্য সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন হাজার। যারা প্রতিদিন ১০ টাকা করে দিচ্ছেন একটি ভালো কাজের বিনিময়ে অভুক্ত মানুষের খাবারের জন্য। তিনি বলেন, ২০১৯ সাল থেকে শুরু হলেও আমাদের ভালো কাজের শুরুটা ২০০৯ সাল থেকে। আরিফুর রহমান শিহাবের নেতৃত্বে এবং অন্যদের অনুপ্রেরণায় আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। মূলত এখানে যারা খেতে আসেন তারা তো আসলে অন্যের উপকার করার সামর্থ্য রাখেন না। তারপরও আমরা দেখেছি তারা চেষ্টা করেন একটি করে ভালো কাজ করার কাউকে সাহায্য করার। যদি কেউ কোনো ভালো কাজ করতে না পারে তাকে আমরা অনুপ্রাণিত করি পরবর্তীতে যেন তিনি একটি ভালো কাজ করতে পারেন। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন ঈদ উৎসব উপলক্ষে আমরা পথশিশুদের জন্য কাজ করে থাকি এবং অসহায় পশু-পাখির জন্য কাজ করে থাকি। এখন আমাদের প্রায় সাড়ে তিন হাজার সদস্য রয়েছেন। আমরা প্রায় প্রতিদিন ৪ হাজার খাবারের ব্যবস্থা করি। খাবার হিসেবে তিন দিন থাকে খিচুড়ি। তিন দিন সাদা ভাত। শুক্রবার বিরিয়ানির ব্যবস্থা থাকে। পৃথিবীতে সবচেয়ে যন্ত্রণাকর হলো ক্ষুধার কষ্ট! এই ক্ষুধার যন্ত্রণার কারণে অসংখ্য মানুষ খারাপ পথ বেছে নেয়, এ বিশ্বাস থেকে ক্ষুধা ও অপরাধমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এ কার্যক্রম চালিয়ে আসছি। সবচেয়ে আনন্দ ও ভালো লাগার ব্যাপার হলো, সারা দিন পরিশ্রমের পরে, যখন আমাদের দেওয়া খাবার তৃপ্তি সহকারে খাওয়ার পর মানুষের মুখে হাসি দেখি, তখন খুশিতে আমাদেরও মন ভরে যায়।