যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক নীতির সর্বশেষ প্রভাব সবচেয়ে তীব্রভাবে পড়েছে ট্রাউজার ও সিনথেটিক পোশাক খাতে (যেসব পোশাকের কৃত্রিম তন্তু তৈরিতে সাধারণত পেট্রোলিয়াম ভিত্তিক বা রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়)। আগে এসব পণ্যে শুল্ক ছিল ২৭ দশমিক ৯ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক যুক্ত হয়ে তা দাঁড়িয়েছে ৪৭ দশমিক ৯ শতাংশে, প্রায় দ্বিগুণ। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র্যাপিড)-এর গবেষণা বলছে, এই এক পরিবর্তনেই প্রায় ২৫৯ মিলিয়ন ডলারের রপ্তানি সরাসরি ঝুঁকির মুখে।
র্যাপিডের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সামগ্রিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি ১২ শতাংশ বা প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার কমতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিকারক প্রায় সব দেশই এই ধাক্কা অনুভব করবে। বাংলাদেশের রপ্তানি কমতে পারে ১৪ শতাংশের বেশি, চীনের ৫৮ শতাংশ, ভারতের ৪৮, ভিয়েতনামের ২৮ এবং ইন্দোনেশিয়ার ২৭ শতাংশ। পোশাক খাতে আরও নির্দিষ্টভাবে, ভারতের পোশাক রপ্তানি কমতে পারে ৮২ শতাংশ পর্যন্ত, চীনের ৪৯ শতাংশ, আর বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ। তাদের গবেষণা বলছে, ভারতের পণ্যে পাল্টা শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশ হলে রপ্তানি হিস্যায় বেশ পরিবর্তন আসবে। তখন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের পোশাক রপ্তানি কমতে পারে ১৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ। সেক্ষেত্রে চীন, বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম রপ্তানি কমতে পারে যথাক্রমে ৫০.৫৪, ১৭.৪৬ এবং ১২.৯১ শতাংশ হারে। র্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. এম এ রাজ্জাক বলেন, ‘বাড়তি শুল্কের কারণে আমদানিকারক দেশের ভোগের চাহিদা কমে যায়। এখন যে হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, তাতে মার্কিন বাজারে ট্রাউজার ও সিনথেটিক পণ্যের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে। এত উচ্চ শুল্কে রপ্তানি ধরে রাখা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য’
ঢাকা বিশ্ববিদালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আবু ইউসুফ বলেন, ‘চীন ও ভারতের মতো বড় সরবরাহকারীরা বড় ধাক্কা খেলে স্বল্প শুল্ক বা মানসম্পন্ন সরবরাহকারীদের জন্য নতুন জানালা খুলতে পারে। তবে এই সুযোগ নিতে হলে বাংলাদেশের মান, উৎপাদন দক্ষতা ও ডেলিভারির গতিতে বড় বিনিয়োগ প্রয়োজন। ‘তিনি সতর্ক করেন যে, অনেক দেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দিকে ঝুঁকবে, ফলে সেখানে দাম কমে যেতে পারে, বাংলাদেশকেও সেই চাপ সামলাতে হবে। রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, ক্রেতারা এখন ২০ শতাংশ পর্যন্ত পাল্টা শুল্ক ভাগ করে নেওয়ার দাবি করছেন। কিন্তু শিল্পের গড় লাভের হার যেখানে ৪ থেকে ৫ শতাংশ, সেখানে এতটা ভাগ নেওয়া সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা মার্কিন বাজারের ওপর অতিরিক্ত নির্ভর হয়ে আছি। শুধু যে সিনথেটিক পোশাক খাত ঝুঁকিতে নয়, রপ্তানি নির্ভর সব পণ্যেই ঝুঁকিতে আছে। কথা হচ্ছে আমরা কত শক্তিশালীভাবে সেগুলো মোকাবিলা করতে পারব। আমাদের কৌশলগত অগ্রযাত্রা শুরু করতে হবে। না হলে এই ধাক্কা সামাল দেওয়া কঠিন হবে।’
ব্যবসায়ী নেতাদের মতে, কাঁচামালের খরচ, লজিস্টিক জটিলতা ও নতুন পরিবেশবান্ধব মানদন্ডের চাপের সঙ্গে পাল্টা শুল্ক মিলে দ্বিগুণ সংকট তৈরি করেছে। সরকারের তরফ থেকে কর রেয়াত, প্রণোদনা ও দ্রুত শুল্ক সমঝোতার ওপর জোর দেওয়া জরুরি বলে তারা মনে করেন। শুল্ক প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায় শুধু ট্রাউজার নয়, পুরো পোশাক শিল্পের জন্য বড় সংকেত বয়ে আনছে। বড় রপ্তানিকারক দেশগুলো হোঁচট খেলেও প্রস্তুতি ছাড়া বাংলাদেশ এগোতে পারবে না।