স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে মধ্য আয়ের দেশে উত্তরণে বাংলাদেশের সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ সুশাসন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার। এ ছাড়া দুর্নীতি, ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা, ট্রাম্পের শুল্কবৃদ্ধির ঘোষণা, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা, বাণিজ্যসুবিধা নিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্বের সঙ্গে দরকষাকষি করার মতো দক্ষ কর্মকর্তার অভাব-এ বিষয়গুলোকেও চ্যালেঞ্জ মনে করছে সরকার। গতকাল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন এক্সপার্ট কমিটির বৈঠকে চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরা হয়।
বৈঠকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, এলডিসি উত্তরণের পর উন্নত দেশগুলোয় জিএসপি সুবিধা পেতে গণতন্ত্র, সুশাসন, মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ৩২টি কনভেনশন পরিপালনের বিষয়ে যে শর্ত রয়েছে সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
গতকাল বিকালে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (অর্থ মন্ত্রণালয়) ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, এলডিসির উড়োজাহাজ এখন আকাশে উড়ছে। ইমারজেন্সি ল্যান্ডিংয়ের সুযোগ নেই। কিছু চ্যালেঞ্জ আছে, উত্তরণ থেকে পিছিয়ে আসার সুযোগ নেই।
এলডিসি থেকে উত্তরণের পর দেশের কর্মসংস্থান ও বেসরকারি খাতের ওপর চাপ আসতে পারে এমন আশঙ্কা করে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, এ চাপ সামাল দিতে সরকার নীতিমালা করবে। ক্ষতিগ্রস্ত খাতের জন্য সরকারের সুরক্ষা কর্মসূচি থাকবে বলেও জানান তিনি।
তৈরি পোশাকশিল্পের কোনো সমস্যা হবে না-এমন দাবি করে বিশেষ সহকারী আরও বলেন, উন্নত দেশগুলোয় জিএসপি সুবিধা পেতে মানবাধিকার, সুশাসন, গণতন্ত্রসহ বিভিন্ন ইস্যুতে যে ৩২টি কনভেনশন রয়েছে সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। আমাদের যে সংস্কার কমিশন হয়েছে তাদের সুপারিশ অনুযায়ী সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সুশাসন, গণতন্ত্র, মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলো নিশ্চিত করা যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা যেসব পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনা দেন তা তুলে ধরেন প্রেস সচিব। তিনি বলেন, এলডিসি উত্তরণে পূর্ণ গতিতে এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এ ছাড়া উত্তরণপর্বের সংকট মোকাবিলা করে সুযোগগুলো কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশকে এ অঞ্চলের ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়েছেন। এলডিসি উত্তরণের পর আমরা যেন এটিকে সে হাব হিসেবে গড়ে তুলতে পারি, তিনি সে নির্দেশনাও দিয়েছেন।
নির্বাচন নির্ভর করছে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের ওপর : এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, কতটা সংস্কার করে নির্বাচন হবে, তা নির্ভর করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপের ওপর। তিনি বলেন, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো যে বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাবে, সেটার ওপর নির্ভর করবে যে আমরা আসলে কতটা সংস্কার করতে চাইছি। সে সময় এলে সিদ্ধান্ত হবে কম সংস্কারে আমরা যাব, না বেশি সংস্কার।
পাকিস্তান সার্কভুক্ত দেশ, সম্পর্কের উন্নয়ন চাই : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা চাচ্ছেন সার্কের যতগুলো দেশ আছে সবার সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন। তিনি বলেন, আমরা তো দক্ষিণ এশিয়ার পরিবারভুক্ত, প্রত্যেক দেশের সঙ্গে আমাদের যাতে সম্পর্কের উন্নয়ন হয়; সে আলোকে পাকিস্তান আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার পরিবারভুক্ত, সার্কের অন্তর্ভুক্ত, তাই আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন চাচ্ছি। একই সঙ্গে আমরা ভারতের সঙ্গেও সম্পর্কের উন্নয়ন চাচ্ছি। ভুটান, নেপালের সঙ্গেও চাচ্ছি।