রাজশাহী মহানগরী বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহ্যবাহী শহর। একসময় ‘সবুজ ও পরিচ্ছন্ন নগরী’ হিসেবে পরিচিত এ শহরটি এখন নানা নাগরিক সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে। দ্রুত নগরায়ণ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও অব্যবস্থাপনার কারণে শহরের সৌন্দর্য ও স্বস্তি উভয়ই নষ্ট হচ্ছে।
গ্রীষ্মকালে রাজশাহীর বহু এলাকায় দেখা দেয় তীব্র পানিসংকট। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় গভীর নলকূপ দিয়েও পর্যাপ্ত পানি তোলা সম্ভব হয় না। অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই শহরের প্রধান সড়কগুলো ডুবে যায়। বৃষ্টি হলে হেতেমখাঁ, বর্ণালী মোড়, সপুরা, রাজপাড়া ও পঞ্চবটি এলাকায় এই জলাবদ্ধতা এখন নিত্যদিনের চিত্র।
রাজশাহীর রাস্তাঘাটের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। অটোরিকশা, ইজিবাইক ও মোটরসাইকেলের অনিয়ন্ত্রিত চলাচল, ফুটপাত দখল ও সঠিক ট্রাফিক ব্যবস্থার অভাবে শহরের চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। সাহেববাজার, ভদ্রা, লক্ষ্মীপুর ও সোনাদীঘি মোড়ে যানজট প্রতিদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এতে কর্মজীবী মানুষ যেমন ভোগান্তিতে পড়ছেন, তেমনি দুর্ঘটনার সংখ্যাও বাড়ছে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন প্রতিদিনই ময়লা-আবর্জনা অপসারণের কাজ চালিয়ে গেলেও তা যথেষ্ট নয়। অনেক এলাকায় ময়লা সময়মতো সংগ্রহ করা হয় না, আবার কোথাও কোথাও খোলা জায়গায় আবর্জনা ফেলা হয়। এতে দুর্গন্ধ, মশা-মাছির উপদ্রব এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। শহরের ড্রেনগুলোও আবর্জনায় ভরাট হয়ে পানি চলাচল ব্যাহত করছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় চিকিৎসা কেন্দ্র হলেও সেখানে রোগীর চাপ সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। পর্যাপ্ত চিকিৎসক, ওষুধ ও আধুনিক সরঞ্জামের অভাবে রোগীরা সঠিক সেবা পান না। বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতেও খরচ বেশি হওয়ায় সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে থেকে যাচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। রাজশাহী শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে অগ্রগামী হলেও শিল্প ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। বেকারত্বের হার দিন দিন বাড়ছে; বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে। নতুন শিল্পাঞ্চল ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সহায়তা না পেলে এ সমস্যা আরও গভীর হবে। পাশাপাশি শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় আবাসন সংকটও তীব্র হচ্ছে; বাসা ভাড়া বেড়ে গেছে কয়েক গুণ।
নাগরিক প্রতিনিধি জামাত খান বলেন, সিটি করপোরেশন এলাকায় মানুষ এখন বহু সেবা থেকে বঞ্চিত। অনেক সম্ভাবনা থাকলেও তা কাজে লাগানো যাচ্ছে না পরিকল্পনার অভাবে। সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল ইসলাম বলেন, নাগরিক সেবা নিশ্চিতে তারা কাজ করছেন। নগরবাসীর জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানের বিষয়টি সরকারি পরিকল্পনার অংশ। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকায় সেটি আপাতত হচ্ছে না।