পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা আরও বাড়াতে পার্লামেন্টে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংবিধান সংশোধন বিল পাস হয়েছে। এই ২৭তম সংবিধান সংশোধনী বিল অনুযায়ী, সেনাপ্রধান জেনারেল অসিম মুনির এখন থেকে পুরো সামরিক বাহিনীর সর্বোচ্চ প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তার নতুন পদবী হবে প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান ।
এই সংশোধনের মাধ্যমে পাকিস্তানের সংবিধানের ২৪৩ অনুচ্ছেদ পরিবর্তন করা হয়েছে। আগে এই অনুচ্ছেদে বলা ছিল, সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণ থাকবে ফেডারেল সরকারের হাতে এবং সর্বোচ্চ কমান্ড প্রেসিডেন্টের অধীনে থাকবে। কিন্তু নতুন আইনে এই নিয়ন্ত্রণ এখন সেনাপ্রধানের হাতে চলে গেছে।
সরকার জানিয়েছে, এই সংশোধনী পাস করার মতো পার্লামেন্টে তাদের পর্যাপ্ত সমর্থন আছে। বিলটি গত সোমবার সিনেটে (উচ্চকক্ষ) পাস হয় এবং শিগগিরই জাতীয় পরিষদেও (ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি) অনুমোদনের আশা করছে।
নতুন সংশোধনে আরও বলা হয়েছে, সংবিধান সম্পর্কিত মামলাগুলো আর সুপ্রিম কোর্টে নয়, বরং নতুন ‘ফেডারেল কনস্টিটিউশনাল কোর্টে’ (সংবিধান আদালত) বিচার হবে। এই আদালতের বিচারপতিরা সরকার কর্তৃক নিয়োগ পাবেন। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট একাধিকবার সরকারের নীতিমালা বাতিল করে দিয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রীদের অপসারণ করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিবর্তন পাকিস্তানের সামরিক ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায়। এর আগে দেশটিতে তিনবার সামরিক অভ্যুত্থান (ক্যু) হয়েছে— ১৯৫৮ সালে আয়ুব খান, ১৯৭৭ সালে জিয়া-উল-হক এবং ১৯৯৯ সালে পারভেজ মোশাররফের মাধ্যমে। তবে এবার সরাসরি সেনা শাসন নয়, বরং সংবিধানের ভেতর দিয়েই সেনাবাহিনীর প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হলো।
পাকিস্তানের সাবেক প্রতিরক্ষা সচিব লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আসিফ ইয়াসিন মালিক বলেছেন, এই সংশোধন আসলে সেনাবাহিনীর কাঠামো মজবুত করার জন্য নয়, বরং একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তির স্বার্থ রক্ষার জন্য করা হয়েছে।
সাবেক মানবাধিকারমন্ত্রী শিরিন মাজারি জানিয়েছেন, এখন থেকে পারমাণবিক অস্ত্রসহ সব ধরনের প্রতিরক্ষা অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ সেনাবাহিনীর হাতে থাকবে। এর ফলে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে জটিলতা বা বিলম্ব ঘটতে পারে।
কাবুলভিত্তিক গণমাধ্যম টোলোনিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সংশোধনীর মাধ্যমে সেনাপ্রধানসহ শীর্ষ জেনারেলরা আইনি দায়মুক্তি (ইমিউনিটি) পাবেন— অর্থাৎ তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা যাবে না।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেন, দেশের প্রতিরক্ষা চাহিদা বদলে গেছে। সরকার ও সেনাবাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক পরামর্শের মাধ্যমেই এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।
তবে বিরোধী দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-এর আন্তর্জাতিক মুখপাত্র জুলফি বুখারি একে কঠোরভাবে সমালোচনা করে বলেন, এই সংশোধন সরকারের হাতে অতিরিক্ত ক্ষমতা দিচ্ছে, যা গণতন্ত্রের মৌলিক ভারসাম্য নষ্ট করবে, বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করবে এবং নাগরিক অধিকার সীমিত করবে।
জেনারেল আসিম মুনিরকে সম্প্রতি ‘ফিল্ড মার্শাল’ পদে উন্নীত করা হয়েছে। আইনমন্ত্রী আজম তারার বলেছেন, তিনি পুরো জাতির নায়ক, তাই সংবিধানে তার পদমর্যাদা সুরক্ষিত রাখা হয়েছে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল