‘গ্যাস কখন আসে কখন যায়, সেটা নিজেরাও বুঝতে পারি না। তবে ভোরবেলায় গ্যাসের চাপ কিছুটা বেশি থাকে। মাঝে বেশ কিছু দিন ফজরের সময় উঠে রান্নাবান্না সেরেছে ঘরের নারীরা। কিন্তু এভাবে তো আর প্রতিনিয়ত সম্ভব নয়। দিনের বেশির ভাগ সময় গ্যাস পাওয়া যায় না। সামনে শীতকাল, এই সংকট আরও চরম হয়ে উঠবে তখন।’ গ্যাস নিয়ে এভাবেই নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন যাত্রাবাড়ীর নবীনগরের বাসিন্দা হাজী মো. নূরুল হক। কয়েক বছর ধরে রাজধানীর দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীতে গ্যাস সংকট দেখা যাচ্ছে। পাইপলাইনে গ্যাসের চাপ নেই বললেই চলে। এতে রান্নাবান্না থেকে শুরু করে দৈনন্দিন অন্যান্য কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। পাল্টে গেছে তাদের দৈনন্দিন রুটিনও। এর প্রভাব পড়েছে জীবনযাত্রায়। গ্যাসের লাইন থাকা সত্ত্বেও সিলিন্ডার বা লাকড়ি কিনে রান্নাবান্নার কাজ চালাতে হচ্ছে এখানে। এমনটাই জানালেন ব্যবসায়ী মো. তারিকুল ইসলাম। বললেন, ‘আমাদের বাড়িতে গ্যাসের লাইন থাকা সত্ত্বেও প্রত্যেক ফ্ল্যাটে সিলিন্ডার ব্যবহার করতে হয়। এতে মাসিক খরচ বেড়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকেও বেশ কয়েকবার জানানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। শুধু আশ্বাসই পেয়েছি, সমাধান পাইনি।’
এলাকাবাসীর অভিযোগ, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অন্তর্গত ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের শহীদ ফারুক সড়কের খানকা শরিফ মসজিদ থেকে পশ্চিমে ওয়াসা রোড পর্যন্ত, দক্ষিণ পাশের সুরুজনগর, জেলেপাড়া গলির জান্নাতুল উম্মাহ মাদরাসা এলাকা, ফুলকুঁড়ি আইডিয়াল হাইস্কুল এলাকা, চন্দনকোঠা নতুন কুঁড়ি হাইস্কুল এলাকা, চাঁনতারা মসজিদের চারপাশ, নবীনগর ঈদগাহ এলাকা ও মেডি-বাংলা হাসপাতালের উত্তর পাশসহ অত্র এলাকায় গ্যাসের তীব্র সংকট রয়েছে।
এ সংকটে অতিষ্ঠ হয়ে মানববন্ধন ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেছেন বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। সম্প্রতি শহীদ ফারুক সড়কে এ কর্মসূচি পালিত হয়। যেখানে শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে গৃহিণী, চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীসহ নানা পেশার লোকজন অংশ নেন।
মানববন্ধনে স্বাগত বক্তব্য দেন আদর্শ পঞ্চায়েত সর্দার আলহাজ হাফেজ মো. তাজউদ্দিন। গ্যাসের সংকট ও তাদের দাবিদাওয়া নিয়ে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন তিনি। তুলে ধরেন নানা সংকটের বাস্তব চিত্র।
কর্মসূচিতে সভাপতির বক্তব্যে দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীর ১ নম্বর পঞ্চায়েতের বড় সর্দার এস এম আনোয়ার আইয়ুব বলেন, গ্যাস সংকটের কারণে ঝুঁকি নিয়ে বাসাবাড়ির ছাদে, বারান্দায়, কক্ষের ভিতর কেউ কেউ লাকড়ির চুলা, আবার কারও কারও সিলিন্ডার গ্যাসে রান্না করতে হচ্ছে। তা ছাড়া এ এলাকার গ্যাস পাইপলাইন অনেক বছরের পুরোনো, সে কারণেও ঝুঁকির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাইপলাইনগুলোর সংস্কার জরুরি। দীর্ঘদিন ধরে চলমান এই গ্যাস সংকটের কারণে এলাকার প্রতিটি পরিবারকেই ভুগতে হচ্ছে। অনতিবিলম্বে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা না নিলে সংশ্লিষ্ট অফিস ঘেরাও কর্মসূচির ডাক দেওয়া হবে বলেও জানানো হয় মানববন্ধন থেকে।