ব্যাংকখেকো নাফিজ সরাফতের লুটের অর্থের একটি বড় অংশ পাচার হয়েছে কানাডা ও দুবাইয়ে। কানাডায় তাঁর একাধিক বাড়ি আছে। কানাডায় বিভিন্ন খাতে নাফিজের অন্তত ৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে। এ ব্যাপারে দুদক তদন্ত করছে বলে এক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছেন। কানাডা ছাড়াও দুবাইয়ে নাফিজের বিপুল সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। সম্প্রতি দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুবাইয়ে নাফিজ সরাফতের কিছু সম্পত্তি জব্দের আদেশ দিয়েছেন বাংলাদেশের আদালত। কিন্তু তা দুবাইয়ে কার্যকর হয়নি। বাংলাদেশে নাফিজ ও তাঁর পরিবারের নামে বিপুল সম্পদ রয়েছে। যার কিছু জব্দ করা হয়েছে। তবে এর বাইরেও নাফিজ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিদিন তাঁর সম্পদের অনুসন্ধান চালিয়ে পেয়েছে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, উত্থানের শুরুটা শেয়ারবাজারে ফান্ড ম্যানেজমেন্ট দিয়ে হলেও গত দেড় দশকে নাফিজ হোটেল, বিদ্যুৎ, মোবাইল টাওয়ার, আবাসন, মিডিয়া, অ্যাগ্রো, প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসার বিস্তার ঘটিয়েছেন। কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ডেরও চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি।
কানাডা-বাংলাদেশ চেম্বার হাউসের (কানাডা) সভাপতি নাফিজ সরাফত কুর্মিটোলা গলফ ক্লাব ও আর্মি গলফ ক্লাবের সদস্য, ওয়ার্ল্ড চেজ ফেডারেশনের (বাংলাদেশ বিভাগ) সহসভাপতি, এমনকি বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতিরও সদস্যপদে আসীন হয়েছিলেন তিনি। তাঁর বিষয়ে অনুসন্ধানের সঙ্গে যুক্ত দুদকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নামে-বেনামে যেখানেই সুযোগ পেয়েছেন, সেখানেই নাফিজ সরাফত কোম্পানির অংশীদারি নিয়েছেন। কখনো অর্থের বিনিময়ে, কখনো ভয়ভীতি প্রদর্শন করে।’
বাংলাদেশ প্রতিদিনের অনুসন্ধানে নাফিজ যেখানে অংশীদার তার একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এতে যেসব প্রতিষ্ঠানে তাঁর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে সেগুলো হলো এআইফাইভ টেক সার্ভিসেস লিমিটেড, আরগাস মিডিয়া সার্ভিসেস লিমিটেড, আরগাস রিসার্চ (বিডি) লিমিটেড, আরোসা জনশক্তি লিমিটেড, বাংলাদেশ (বিডি) রেস লিমিটেড, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস, বাংলাদেশ ক্যাপিটাল ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড, বাংলাদেশ রেস ম্যানেজমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড, কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল প্রাইমারি স্কুল অব বিডি লিমিটেড, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, গার্ডেনিয়া অয়ার্স লিমিটেড, গ্লোবাল এনার্জি লিমিটেড, হীরা ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট (বিডি) লিমিটেড, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি, লাইফ ইন্স্যুরেন্স করপোরেশন (এলআইসি) অব বাংলাদেশ লিমিটেড, লুমিন্যাস ইক্যুয়িটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড, মেসার্স সাজেদা চৌধুরী মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মিল্ক ওয়েভ ডেইরি লিমিটেড, মৌ ভ্যালি লিমিটেড, ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেড, নিউ এজ আইটি সল্যুশন (প্রা.) লিমিটেড, নিউজ বাংলা মিডিয়া লিমিটেড, দৈনিক বাংলা লিমিটেড, সিটিজেন টেলিভিশন লিমিটেড, পদ্মা ব্যাংক পিএলসি, পদ্মা ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেড, রেস পোর্টফোলিও অ্যান্ড ইস্যু ম্যানেজমেন্ট, রয়্যাল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা ট্রাস্ট, সিডিনেট কমিউনিকেশনস লিমিটেড, কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ক্রিম অ্যান্ড মিল্ক লিমিটেড, ডিমিটার ডিজিটাল ডিফেন্স লিমিটেড, ডাইনেস্টি হোমস লিমিটেড, ফিনেক্স সফটওয়্যার লিমিটেড, ফ্রন্টিয়ারস ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড, এস অ্যান্ড টি ট্রেডিং (প্রা.) লিমিটেড, এসফোর নেস্ট ডেভেলপমেন্টস লিমিটেড, সারাক্ষণ মিডিয়া লিমিটেড, এসএফআইএল ফাইন্যান্স পিএলসি, এসএফএল হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেড, এসএফএল ইউনিক নিব্রাস মেঘনাঘাট পাওয়ার পিএলসি, শান্তিনিকেতন প্রপার্টিজ লিমিটেড, সিঙ্গেল ক্লিক আইটি সলিউশন (প্রা.) লিমিটেড, সফটহরাইজন (প্রা.) লিমিটেড, সোনারগাঁও ইকোনমিক জোন লিমিটেড, সাউথইস্ট ব্যাংক পিএলসি, স্টার ইনফ্রাস্ট্রাকচার কনসোর্টিয়াম ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড, স্ট্র্যাটেজিক ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড, স্ট্র্যাটেজিক ফাইন্যান্স লিমিটেড, ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট পিএলসি এবং জে অ্যান্ড জে এনার্জি লিমিটেড। তবে এর বাইরেও বেনামে রয়েছে তাঁর বিপুল সম্পদ।