চট্টগ্রাম নগরের অন্যতম সমস্যা জলাবদ্ধতা ও যানজট। তবে জলাবদ্ধতা মৌসুমি সমস্যা। কিন্তু বছরজুড়েই যানজটে স্থবির-অচল হয়ে থাকে পুরো নগর। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) এবার মনোরেল দিয়ে নগরের যানজট নিয়ন্ত্রণের স্বপ্ন দেখছে।
২৯ সেপ্টেম্বর থেকে মনোরেলের সম্ভাব্যতা যাচাই কাজের প্রক্রিয়া শুরু হয়। মনোরেলের সম্ভাব্য দৈর্ঘ্য হবে তিন রুটে ৫৪ কিলোমিটার। ডিপোর জন্য দরকার ৫০ একর ভূমি। এটি নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় হতে পারে ৩০ হাজার কোটি টাকা। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে সময় লাগবে সাত-অট মাস। নির্মাণকাজ শেষ করতে সময় লাগবে ৩-৪ বছর।
জানা যায়, চসিকের উদ্যোগে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বিদেশি দুই প্রতিষ্ঠান ‘আরব কন্ট্রাক্টরস ও ওরাসকম পেনিনসুলা কনসোর্টিয়াম’। সহযোগিতা করছে গ্রেটার চিটাগাং ইকোনমিক ফোরাম। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারি (পিপিপি) পদ্ধতিতে মনোরেল নির্মাণ হবে। এ নিয়ে গত ১ জুন চসিকের সঙ্গে আরব কন্ট্রাক্টরস ও ওরাসকম পেনিনসুলা কনসোর্টিয়ামের সমঝোতা স্মারক চুক্তি হয়। এরপর দাপ্তরিক বিভিন্ন কাজ শেষ করে গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে সার্ভে কাজের প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রকল্পের ওয়ার্কশপ ও অফিসের জন্য দরকার প্রায় ৫০ একর আয়তনের একটি ডিপো। ডিপোর জন্য মনোরেলের সম্ভাব্য রুটগুলোর কাছাকাছি এমন চারটি রুট প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয়। এগুলো হলো কালুরঘাট, চসিকের ১ নম্বর ওয়ার্ডের নন্দীরহাট, পতেঙ্গা এবং কাট্টলী।
আরব কন্ট্রাক্টরস ও ওরাসকম পেনিনসুলা কনসোর্টিয়ামের প্রধান প্রতিনিধি কাউসার আলম চৌধুরী বলেন, মনোরেল চালু হলে ওরাসকম যাত্রীপ্রতি অন্তত ৫ টাকা হারে চসিককে মুনাফা প্রদান করবে। পিপিওটি সিস্টেমে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে প্রতিষ্ঠানটি। প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে আনুমানিক ৩০ হাজার কোটি টাকা। প্রাথমিকভাবে ২০-২৫ বছর প্রতিষ্ঠানটি নিজেরা পরিচালনার পর পরবর্তীতে চসিককে হস্তান্তর করা হবে। সেন্ট্রাল স্টেশন, স্টোরেজসহ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আনুমানিক ৫০ একর জায়গা লাগবে। প্রতিদিন মনোরেল পরিচালনায় ৩০-৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হবে।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিকভাবে সম্ভাব্য চারটি রুটে চলাচলের বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। এর মধ্যে কালুরঘাট থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত (বহদ্দারহাট, চকবাজার, লালখান বাজার, দেওয়ানহাট ও পতেঙ্গা হয়ে) ২৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার। সিটি গেট থেকে শহীদ বশিরুজ্জামান চত্বর পর্যন্ত (একে খান, নিমতলী, সদরঘাট ও ফিরিঙ্গি বাজার) ১৩ দশমিক ৫ কিলোমিটার। অক্সিজেন থেকে ফিরিঙ্গি বাজার (মুরাদপুর, পাঁচলাইশ, আন্দরকিল্লা ও কোতোয়ালি) পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার। সিটি গেট থেকে পোর্ট কানেক্টিং রোড, ভায়া আগ্রাবাদ এক্সেস, নিমতলা পর্যন্ত ১০ দশমিক ৯ কিমি রেললাইন করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে প্রতি ঘণ্টায় কয়েক হাজার মানুষ নিরাপদ ও আরামদায়ক পরিবহনে যাতায়াত করতে পারবে। মনোরেল চলবে বিদ্যুতের সাহায্যে। ফলে কমবে দূষণ। এটি মূল সড়ক ব্যবহার করবে না, এ কারণে কমবে যানজট। আগ্রাবাদ, চৌমুহনী, মুরাদপুর, জিইসি, বহদ্দারহাট ও দেওয়ানহাটের মতো ব্যস্ততম এলাকায় যানজটের চাপ কমাবে। এর সঙ্গে কমবে ভ্রমণ ব্যয়।