কুমিল্লা নগরীতে নেই খেলার মাঠ। নগরীর বাসিন্দাদের ভরসা ঈদগাহ আর অলিগলি। খেলাধুলার সুযোগ না পেয়ে তরুণরা ইন্টারনেটে আসক্ত হচ্ছে, ঝুঁকছে মাদকে। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে শিশুদের শারীরিক-মানসিক বিকাশ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমিল্লা নগরী পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশন হয়েছে ১৪ বছর। কিন্তু শিশু, কিশোর, তরুণ কারও জন্য কোনো বিনোদনের ব্যবস্থা নেই। একমাত্র জায়গা কুমিল্লা স্টেডিয়াম। সেটি শুধু জাতীয় পর্যায়ের খেলার জন্য বরাদ্দ। সর্বসাধারণের জন্য কোনো মাঠ নেই। নগরীর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ আর মহল্লার গলিই একমাত্র ভরসা। ঈদগাহ মাঠে গিয়ে দেখা যায়, এক মাঠে খেলছে ১০টি টিম। কেউ ক্রিকেট, কেউ হকি, কেউ বা ফুটবল। সিমেন্ট ঢালাই মাঠে পড়ে কারও হাত-পা কেটে যাচ্ছে। কুমিল্লা হাইস্কুল মাঠ, মডার্ন স্কুল মাঠ, কালেক্টরেট মাঠ থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়। জিলা স্কুল মাঠ ও নবাব ফয়জুন্নেছা স্কুলের মাঠ নিজেদের জন্য সংরক্ষিত। ভিক্টোরিয়া কলেজ মাঠ খেলার উপযোগী নয়।
তরুণ আজহারুল ইসলাম জাহিদ বলেন, আমাদের মাঠ না থাকায় ঈদগাহে খেলতে হচ্ছে। একদিকে ফুটবল আসে অন্যদিকে ক্রিকেট বল আসে। নগরীতে খেলার মাঠ থাকলে আমাদের উপকার হতো। নগরীর হালুয়াপাড়ার বাসিন্দা ফাহিম বলেন, পাকা মাঠে খেলা ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু উপায় নেই। আমরা খেলাধুলার উপযুক্ত একটি মাঠ চাই।
শিক্ষক এনামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমি নগরীর একটি মাদ্রাসার শিক্ষক। কোথাও খেলার জায়গা না পেয়ে শিক্ষার্থীদের ঈদগাহ মাঠে নিয়ে এসেছেন। খেলার মাঠ থাকলে শিক্ষার্থীরা ভালো সময় কাটাতে পারত।’ ব্যাংক কর্মকর্তা খোরশেদ আলম মোল্লা বলেন, ‘এই নগরীর মানুষের খেলার ও শরীর চর্চার জন্য কোনো মাঠ নেই। তারা বাধ্য হয়ে ঈদগাহ মাঠে আসেন। নগরীতে কয়েকটি খেলার মাঠ হলে তরুণ প্রজন্ম মাদক থেকে দূরে থাকবে।’
কুমিল্লা ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটির সদস্য ক্রীড়া সংগঠক বদরুল হুদা জেনু বলেন, কুমিল্লা নগর কর্তৃপক্ষ নগরবাসীর বিনোদনের বিষয়ে উদাসীন। বিভিন্ন শহরে গেলে নগর মিলনায়তন, নগর জাদুঘরসহ নানা আয়োজন দেখি। কিন্তু কুমিল্লায় কিছুই নেই। কর্তৃপক্ষ যদি এখানে খেলার মাঠ তৈরি করেন তাহলে তারা নগরবাসীর হৃদয়ে স্থান করে নিতে পারবেন। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. শাহ আলম বলেন, ‘নগরীতে একাধিক খেলার মাঠ প্রয়োজন। এ জন্য আমরা একটি প্রকল্প তৈরি করছি। সরকারের সহযোগিতা পেলে আমরা নগরবাসীর জন্য ভালো কিছু করতে পারব।’