এক কাপ চায়ের দাম মাত্র ১ টাকা। তাও আবার ৩৫ বছর ধরে একই দামে বিক্রি হচ্ছে এ চা। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার বোয়ালমারী গ্রামের ক্ষুদ্র চা দোকানি মহির উদ্দিন এ কাজ করে যাচ্ছেন। জীবদ্দশায় কখনো চায়ের দাম বাড়াবেন না বলেও তিনি সংকল্প করেছেন। বর্তমানে এক কাপ লাল চা তৈরি করতে যেখানে সর্বনিম্ন ৩ থেকে ৪ টাকা খরচ হয়। সেখানে সব শ্রেণির মানুষকে ১ টাকায় চা পান করিয়ে আনন্দ পান মহির উদ্দিন। দামুড়হুদা উপজেলার বোয়ালমারী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, অনেকটা খোলা আকাশের নিচে ইট-কাঠের টেবিলে চা তৈরি করছেন মহির। পাশে বাঁশের তৈরি বেঞ্চে বসতে দেন ক্রেতাদের। রাত ৯-১০টা পর্যন্ত চলে মহিরের চা বিক্রি। গ্রামের সবার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎও হয় এ সময়।
স্থানীয়রা জানান, চা দোকানি মহির উদ্দিন মূলত কৃষিকাজ ও দিনমজুরি করেন। দৈনন্দিন কাজের শেষে অবসর কাটাতে ও সাধারণ মানুষে সান্নিধ্য পেতে পছন্দ করেন তিনি। ১৯৯০ সালে বাড়ির পাশেই ছোট্ট ঝুপড়িতে চায়ের দোকান দেন মহির। উদ্দেশ্য, চা বিক্রি মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে থাকা।
মহির উদ্দিন জানান, ১৯৯০ সালের পর থেকে ধাপে ধাপে চা-চিনির দাম বাড়লেও মহিরের চায়ের দাম বাড়েনি। তিনি বলেন, লাভের আশায় নয়; মানুষকে চা পান করিয়ে এবং তাদের সঙ্গে গল্প করে সময় কাটাতেই পছন্দ তার। তিনি যত দিন সুস্থভাবে বেঁচে থাকবেন ১ টাকা কাপ মূল্যে চা বিক্রি চালু রাখবেন।
স্থানীয় যুবক নজরুল ইসলাম বলেন, সকালে ফজরের নামাজ পড়ে চায়ের দোকান খোলেন মহির উদ্দিন। চলে সকাল ৮টা পর্যন্ত। পরে প্রয়োজন মতো নিজের বা অন্যের কৃষিখেতে কাজে যান তিনি। বিকাল ৪টা বাজলে আবারও শুরু হয় মহিরের ১ টাকার চা বিক্রি। চলে রাত ৯টা/১০টা পর্যন্ত।
নজরুল বলেন, তিনি ছোট থেকে দেখছেন মহিরের ১ টাকার চায়ের দোকান। নিজেও চা দোকানের মাচায় বসেন মহিরের চায়ের আড্ডায়। মহিরের চায়ের দাম ১ টাকা কাপ হলেও এর স্বাদও অনেক ভালো।
চায়ের দোকানে আসা পাশের জেলা মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার ঢোলমারী গ্রামের সালেহার হোসেন বলেন, তিনি প্রায়ই বোয়ালমারী গ্রামে আসেন দিনমজুরের কাজ করতে। এখানে এলেই মহিরের দোকানে বসেন ১ টাকার চা খেতে।
মহিরের পাশের গ্রাম জগন্নাথপুর থেকে চা পান করতে আসা যুবক হাফিজুল ইসলাম বলেন, তিনি দেশের অনেক জেলায় গিয়েছেন কিন্তু কোথাও ১ টাকায় চা বিক্রি করতে দেখেননি। মহিরের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ এ গ্রামের পরিচিতি বাড়িয়েছে। মহির বলেন, সারা দিনে চা বিক্রিতে তার লাভের পরিবর্তে লোকশানই গুনতে হয়। তাতেও আনন্দ পান তিনি।