সাম্য হত্যা মামলায় সাতজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে মামলার তদন্ত সংস্থা ডিবি পুলিশ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাঁজা বিক্রি করতে নিষেধ করায় সাম্যকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে বলে এতে উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আখতার মোর্শেদ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকার মহানগর হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। গতকাল বিষয়টি তিনি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
আখতার মোর্শেদ জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র, এফ রহমান হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক শাহরিয়ার আলম সাম্যকে ছুরিকাঘাতে হত্যার মামলায় সাতজনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় চারজনের অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে। অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিরা হলেন মেহেদী হাসান, মো. রাব্বি ওরফে কবুতর রাব্বি, মো. রিপন ওরফে আকাশ, নাহিদ হাসান পাপেল, মো. হৃদয় ইসলাম, মো. হারুন অর রশিদ সোহাগ ওরফে লম্বু সোহাগ এবং মো. রবিন। এরা সবাই মাদক কারবারি বলে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন।
অব্যাহতির সুপারিশ পেয়েছেন তামিম হাওলাদার, সম্রাট মল্লিক, পলাশ সরদার এবং সুজন সরকার।
১৩ মে রাত ১১টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভিতরে ছুরিকাঘাতে আহত হন শাহরিয়ার আলম সাম্য (২৫)। রাত ১২টার দিকে রক্তাক্ত অবস্থায় বন্ধুরা তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় ১৪ মে সকালে নিহতের বড় ভাই শরীফুল ইসলাম শাহবাগ থানায় ১০-১২ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
তদন্ত কর্মকর্তা আখতার মোর্শেদ অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, আসামি মেহেদী হাসান, রিপন, কবুতর রাব্বি, পাপেল, হৃদয়, রবিন, সোহাগরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চিহ্নিত মাদক কারবারি। মেহেদী তাদের দলনেতা। তারা মেহেদীর কাছ থেকে মাদকদ্রব্য গাঁজা নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মাঝখানে মন্দির গেট এলাকায় খুচরা বিক্রি করে। বিক্রি শেষে সবাই মেহেদীর কাছে টাকা জমা দিত। ঘটনার আগে রিপন ও রাব্বি মেহেদীকে ঠিকমতো গাঁজা বিক্রির টাকা না দিয়ে বলে, তাদের গাঁজা বিক্রির টাকা কিছু মাস্তান জোর করে নিয়ে যায়। যার কারণে তারা মেহেদীকে নিয়মিত গাঁজা বিক্রির টাকা দিতে পারে না। এ রকম পরিস্থিতি হলে মেহেদী তখন সবাইকে একসঙ্গে প্রতিহত করার জন্য বলে এবং কয়েকজনকে সুইচ গিয়ার (চাকু) ও ইলেকট্রিক ট্রেজারগান কিনে দেয়। মেহেদী, কবুতর রাব্বি ও রিপনরা যেন উদ্যানে গাঁজা বিক্রি না করে সেজন্য সাম্য ও তাঁর বন্ধুরা নিষেধ করেছিলেন। এ কারণেই তাঁদের মধ্যে শত্রুতার সৃষ্টি হয়।
তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন অর্থাৎ ১৩ মে রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চের কাছে কবুতর রাব্বি প্রতিদিনের মতো গাঁজা বিক্রি করছিল। তখন তার হাতে একটি ইলেকট্রিক ট্রেজারগান ছিল। মেহেদীর ছত্রছায়ায় কবুতর রাব্বি ট্রেজারগান এবং সুইচ গিয়ার নিয়ে সব সময় চলাফেরা করে ও মাদক বিলি করে। কবুতর রাব্বির সঙ্গে পাপেল ও রিপন সব সময় থাকত। রাতে সাম্য একটি মোটরসাইকেলে তাঁর দুই বন্ধুসহ মুক্তমঞ্চের দিকে এলে কবুতর রাব্বিকে ইলেকট্রিক ট্রেজারগান হাতে দেখতে পেয়ে তাকে থামতে বলেন। রাব্বি তখন মুক্তমঞ্চ থেকে ৩০-৩৫ গজ দূরে ঘটনাস্থল গোলপুকুরের (পুরাতন ফোয়ারা) দিকে দৌড় দেয়। সাম্য তাকে মোটরসাইকেলে ধাওয়া করে ধরে ফেলেন এবং ইলেকট্রিক ট্রেজারগানটি নেওয়ার চেষ্টা করেন। ট্রেজারগানটি না দিলে সাম্য রাব্বিকে চড়থাপড় মারেন। রাব্বির চিৎকারে পাপেল, মন্দিরের পাশে ক্যান্টিন থেকে রিপন, মেহেদী, সোহাগ, হৃদয় ও রবিনরা এগিয়ে এসে সাম্য ও তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে তর্কাতর্কি ও হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। তাদের ধস্তাধস্তিতে ঘটনাস্থলে আগে থেকে দাঁড়িয়ে থাকা পথচারীর একটি মোটরসাইকেল পড়ে গিয়ে লুকিং গ্লাস ভেঙে যায়। তখন মোটরসাইকেলের একজন (পলাশ সর্দার) তাদের অন্যত্র গিয়ে মারামারি করতে বলেন। মেহেদী মোটরসাইকেলের সেই ব্যক্তিকে (পলাশ) চোখে মুখে ঘুসি মেরে অজ্ঞান করে ফেলে। তা দেখে তাদের সঙ্গে থাকা অন্য একজন (সম্রাট মল্লিক) এগিয়ে গেলে মেহেদী তার কাছে থাকা সুইচ গিয়ার (চাকু) দিয়ে তাঁকে ডান পায়ের ঊরুতে ছুরিকাঘাত করে, এতে সে মাটিতে পড়ে যায়।
একই সময়ে সাম্যর সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িত পাপেলকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য মেহেদী ভিকটিম সাম্যর বুকে ঘুসি মারে এবং কবুতর রাব্বির কাছে থাকা সুইচ গিয়ার দিয়ে সে সাম্যর ডান পায়ের রানে চাকু মারলে তিনিও মাটিতে পড়ে যান। সঙ্গের বন্ধু ও মামলার সাক্ষী রাফি এবং বায়েজিদ সাম্যকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়।