আওয়ামী সরকারের প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের এক বিতর্কিত নির্দেশনার ফলে টেলিযোগাযোগ খাতে বছরে ২০০ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এরই মধ্যে হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব হারিয়েছে সরকার। অচিরেই নতুন নীতিমালা আসবে- এই অজুহাত দিয়ে ২০২০ সালের অক্টোবরে ওই নির্দেশনা দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র জয়। তার এই নির্দেশনার কারণে আন্তর্জাতিক এসএমএস সেবা মোবাইল অপারেটরদের হাতে থেকে যায়। কথিত আছে, জয়ের এই বিতর্কিত নির্দেশনার নেপথ্যে বড় ধরনের আর্থিক লেনদেন হয়েছিল।
লাইসেন্সিং গাইডলাইনস ও আইএলডিটিএস নীতিমালা অনুসারে ইন্টারনেট ছাড়া সব আন্তর্জাতিক সেবা আইজিডব্লিউর মাধ্যমে পরিচালনা করার কথা। অথচ ২০০৮ সালে আইজিডব্লিউ চালুর পর থেকেই বিটিআরসি আন্তর্জাতিক এসএমএস সেবা, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অজুহাতে আইজিডব্লিউর আওতার বাইরে রাখে এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরদের (এমএনও) হাতে তুলে দেয়। এর ফলে বাড়ছে মানি লন্ডারিং ও জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণ অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিগত দিনগুলোতে বেশ কয়েকবার চিঠি চালাচালি হয়েছে। কিন্তু সজীব ওয়াজেদ জয়ের ওই বিতর্কিত সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেনি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য আওয়ামী আমলেও কয়েক দফা বিটিআরসি চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দিয়েছিল আইজিডব্লিউ অপারেটরদের সংগঠন আইওএফ। হাসিনা আমলে সর্বশেষ চিঠি দেওয়া হয় ২০২৪ সালের ২৮ এপ্রিল। পট পরিবর্তনের পর গত বছর ২ সেপ্টেম্বর বিটিআরসি চেয়ারম্যানকে এবং ১৮ ডিসেম্বরে সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা বরাবর চিঠি দেয় তারা। সর্বশেষ চলতি বছরের ২৪ মার্চ বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগকে চিঠি দিয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের আবেদন জানায় আইওএফ। কিন্তু এখন পর্যন্ত জয়ের বিতর্কিত ওই সিদ্ধান্ত বহাল আছে বলে অভিযোগ করেছেন আইওএফ প্রেসিডেন্ট আসিফ সিরাজ রব্বানী। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী আইজিডব্লিউ অপারেটররা আন্তর্জাতিক ভয়েস কলের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক এসএমএস ব্যবসায় প্রবেশাধিকার পাবেন ধরে নিয়েই ব্যাপক বিনিয়োগ করেছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা এ ব্যবসা পরিচালনার অনুমোদন না পাওয়ায় বিপুল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
সরকারের রাজস্ব হারানোর ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি জানান, প্রতি মাসে হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে গড়ে ৩ কোটির বেশি আন্তর্জাতিক ইনকামিং এটুপি এসএমএস বাংলাদেশে প্রবেশ করে। বর্তমান গড় বাজারদর এসএমএস প্রতি ৮ সেন্ট (ইউএসডি) হিসাবে মাসে আয় ২৪ লাখ ডলার। বর্তমানে মোবাইল অপারেটরদের থেকে বিটিআরসি সর্বোচ্চ মাত্র ১ লাখ ৫৬ হাজার ডলার আয় করতে পারে (৫.৫% হারে রাজস্ব ভাগাভাগি এবং অতিরিক্ত ১% হারে সামাজিক দায়িত্ব তহবিল)। কিন্তু নীতিমালা অনুযায়ী যদি আইজিডব্লিউর মাধ্যমে এই সেবা পরিচালিত হতো, সে ক্ষেত্রে বিটিআরসি কেবল আইজিডব্লিউ থেকেই ৯ লাখ ৬০ হাজার ডলার (৪০% রাজস্ব ভাগাভাগি) আয় করতে পারত। উপরন্তু আইসিএক্স এবং মোবাইল অপারেটরদের রাজস্ব ভাগাভাগি থেকে বিটিআরসি আরও ২ লাখ ৪৫ হাজার ডলার আয় করতে পারত। সব মিলিয়ে বিটিআরসির মাসিক আয় দাঁড়াত কমপক্ষে ১২ লাখ ৫ হাজার ডলার। অর্থাৎ বিটিআরসির বর্তমান আয় থেকে প্রায় ৮ গুণ বৃদ্ধি পেত। বিটিআরসি জানিয়েছে, তারা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। এরই মধ্যে বৈঠক হয়েছে। শিগগিরই এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।