জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিশ্বের ১০৯টি দেশের ৬৩০ কোটি মানুষের মধ্যে ১১০ কোটি (প্রায় ১৮ শতাংশ) চরম বহুমাত্রিক দারিদ্র্যে ভুগছে। সরাসরি জলবায়ু ঝুঁকিতে রয়েছে বিশ্বের প্রায় ৯০ কোটি মানুষ। গতকাল অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। পোভার্টি হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের (ওপিএইচআই) যৌথ বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ৮৮ কোটি ৭ লাখ মানুষ অন্তত একটি জলবায়ু সমস্যার সরাসরি সম্মুখীন। এর মধ্যে ৬০ কোটি ৮ লাখ চরম তাপে, ৫৭ কোটি ৭ লাখ দূষণে, ৪৬ কোটি ৫ লাখ বন্যায় এবং ২০ কোটি ৭ লাখ খরায় ভুগছে। প্রায় ৬৫ কোটির বেশি মানুষ অন্তত দুই ধরনের ঝুঁকিতে, ৩০ কোটির বেশি মানুষ তিন বা চার ধরনের বিপদের সম্মুখীন এবং ১ কোটি ১ লাখ মানুষ এক বছরে চারটি বিপদই অনুভব করেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দারিদ্র্য ও জলবায়ু বিপদের যুগপৎ উপস্থিতি এখন বৈশ্বিক সংকটে পরিণত হয়েছে। এই পরিমাপের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে শিশু মৃত্যুহার, বাসস্থান, স্যানিটেশন, বিদ্যুৎ, এবং শিক্ষার মতো মৌলিক সূচক। এদের অর্ধেকেরও বেশি অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশু।
ইউএনডিপির ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক হাওলিয়াং শু বলেন, খরা, বন্যা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে কেউই পুরোপুরি নিরাপদ নয়। কিন্তু সবচেয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীই এর সবচেয়ে কঠিন প্রভাবের শিকার। নভেম্বর মাসে ব্রাজিলে অনুষ্ঠেয় আসন্ন ঈঙচ৩০ জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্বনেতাদের জন্য একটি সুযোগ, যেখানে জলবায়ু পদক্ষেপকে দারিদ্র্য মোকাবিলার পদক্ষেপ হিসেবেও বিবেচনা করতে হবে। প্রতিবেদনে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয় বলিভিয়ার গুয়ারানি আদিবাসী সম্প্রদায়ের সদস্য রিকার্ডোকে। দিনমজুর হিসেবে অল্প আয়ে ১৮ জনের সঙ্গে একটি ছোট ঘরে বসবাস করেন রিকার্ডো। স্ত্রী, তিন সন্তান, বাবা-মা এবং আরও কয়েকজন আত্মীয় নিয়ে একটি ঘরে তাদের বসবাস। বাড়িতে মাত্র একটি বাথরুম, কাঠ ও কয়লায় চালিত রান্নাঘর এবং কোনো শিশুই স্কুলে যায় না। প্রতিবেদনে বলা হয়, সাহারার দক্ষিণাঞ্চলীয় আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ায় মানুষ দারিদ্র্যের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চরম তাপমাত্রা, খরা, বন্যা ও বায়ুদূষণ এই চারটি জলবায়ু ঝুঁকির কারণে এই অঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিশেষভাবে ঝুঁকিতে রয়েছে।