জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, জুলাই সনদ জাতীয় দলিল হিসেবে তৈরি হয়েছে। তার বাস্তবায়ন দ্রুততার সঙ্গে ঘটবে। নাগরিকদের মতামতের মধ্য দিয়ে এ দিকনির্দেশনা বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে ভবিষ্যতে পরিচালনা করবে। গতকাল বিকালে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, আমাদের যে স্বপ্ন, বাংলাদেশের মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা, তাকে এগিয়ে নিতে একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যে চেষ্টা, তাতে একটি দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্যই দেশের রাজনৈতিক দলগুলো প্রায় এক বছর ধরে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে এ জাতীয় সনদে উপনীত হয়েছে। জাতীয় সনদ কেবল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি নয়, এটি হচ্ছে নাগরিকের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর এবং রাষ্ট্রের একটি সামাজিক চুক্তি। এ সামাজিক চুক্তির প্রত্যাশা প্রত্যেকটি বিষয়ের মধ্যে জড়িত আছে। গত বছরের জুলাই-আগস্ট গণ অভ্যুত্থানে যারা প্রাণ দিয়েছেন, যারা আহত হয়েছেন, যারা আজকে আহত আছেন, যে জুলাই যোদ্ধারা আজকেও সামগ্রিকভাবে কষ্টকর জীবনযাপন করছেন, তাদের প্রত্যেকের অবদানের মধ্য দিয়ে এ সনদ তৈরি হয়েছে। কেননা জুলাই-আগস্টের গণ অভ্যুত্থান দীর্ঘদিনের রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য যে আকাঙ্ক্ষা তার প্রতিফলন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে গত ১৬ বছর ফ্যাসিবাদী শাসন তৈরি হয়েছিল, তার বিরুদ্ধে যে সাহসিকতা, যে দৃঢ়তা বাংলাদেশের নাগরিকরা দেখিয়েছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সূচনা এক দফা দাবিতে পরিণত হয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত ফ্যাসিবাদী শাসককে পলায়নে বাধ্য করতে পেরেছে। সেই অর্জনের একটি স্মারক হচ্ছে এই জাতীয় সনদ। এখানেই এর শেষ নয়। আমরা মনে করি, রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য আমাদের যে চেষ্টা, সেই চেষ্টা একদিনে সাফল্য অর্জন করবে না। একটি দলিল কেবলমাত্র সেই নিশ্চয়তা দেবে না। যে জাতীয় দলিল তৈরি হয়েছে, তার বাস্তবায়ন ঘটবে। নাগরিকদের মতামতের মধ্য দিয়ে এই দিকনির্দেশনা বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে ভবিষ্যতে পরিচালনা করবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের মতের পার্থক্য থাকবে, রাজনীতিতে মতপার্থক্য না থাকলে তা গণতান্ত্রিক হয় না। মতের পার্থক্য থাকবে, পথের পার্থক্য থাকবে, কিন্তু এক জায়গায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা যে কোনো ধরনের স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে সবাই দাঁড়িয়ে থাকব। সেই স্বপ্ন, সেই প্রত্যাশা, সেই চেষ্টার স্মারক যতটুকু আমরা অর্জন করেছি, এটি প্রথম পদক্ষেপ।
এর আগে ঐকমত্য কমিশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, জুলাই বীরযোদ্ধাদের সঙ্গে আলোচনাসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এর অঙ্গীকারনামার পঞ্চম দফার পরিবর্তন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে জুলাই বীরযোদ্ধাদের দাবির প্রতিফলন ঘটিয়ে প্রয়োজনীয় জরুরি সংশোধন করা হয়েছে।