প্রতি বছরের মতো এবারও ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ও আকচা ইউনিয়নের শুক নদীর তীরে বুড়ির বাঁধে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী মাছ ধরার উৎসব। বাঁধের গেট খুলে দেওয়ার পর আশপাশের গ্রাম থেকে হাজারো মানুষ এই উৎসবে অংশ নিতে এসেছেন। তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী মাছ না পাওয়ায় হতাশ হয়েছেন দূরদূরান্ত থেকে আসা মাছ শিকারিরা। সেই সঙ্গে কারেন্ট জাল ও রিং জালের ব্যবহারের কারণে বিপাকে পড়েছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাতে জাল নিয়ে সারিবদ্ধভাবে পানিতে নেমেছেন হাজারো মানুষ। কেউ ভেলায়, কেউ ছোট নৌকায় করে মাছ ধরছেন প্রতিযোগিতার মতো উৎসাহ নিয়ে। দৃশ্যটি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ও চিলারং ইউনিয়নের শুক নদীর বুড়ির বাঁধ এলাকায়।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে বাঁধের পানি ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই শুরু হয় মাছ ধরার মহোৎসব। আজ শনিবার দিনভরও চলবে এই আয়োজন। নারী-পুরুষ, শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাও অংশ নিয়েছেন মাছ ধরায়। কারও হাতে পলো, কারও হাতে চাবি জাল, খেয়া জাল, টানা জাল কিংবা ছেঁকা জাল। যাদের কোনো সরঞ্জাম নেই, তারাও খালি হাতে কাঁদায় মাছ খুঁজছেন। কেউ আবার ভিড় জমিয়েছেন মাছ ধরা দেখতে। এই উৎসব ঘিরে বাঁধ এলাকায় বসেছে নানা খাবারের দোকান ও অস্থায়ী হাটবাজার।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৫১-৫২ সালে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে এ অঞ্চলের কৃষিজমিতে সেচের সুবিধার জন্য এখানে একটি জলকপাট (সুইসগেট) নির্মাণ করা হয়। সারা বছর এই বাঁধে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকলেও, প্রতি বছর পানি ছেড়ে দেওয়ার সময় মাছ ধরার অনুমতি দেওয়া হয়। এ সময় মৎস্য অধিদফতরের উদ্যোগে ছাড়া মাছের পোনা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদগুলো (আকচা ও চিলারং ইউপি) দেখভাল করে। প্রায় ৫০ একর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত বুড়ির বাঁধ এখন একটি মৎস্য অভয়াশ্রম হিসেবে পরিচিত।
মাছ ধরতে আসা সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি এলাকার আসলাম, রনি ও ফারুক তিন বন্ধু বলেন, প্রতিবারই আমরা এখানে মাছ ধরতে আসি। এবারও এসেছি। এখানে আসলে মেলার মতো পরিবেশ হয়, সবাই একসঙ্গে মাছ ধরে আনন্দ পাই। তবে এবার মাছ খুব কম। গতকাল রাত থেকে জাল ফেলেছি, সব মিলিয়ে ১ থেকে ২ কেজির মতো মাছ পেয়েছি। রিং জাল ব্যবহারের কারণে আমাদের মতো যারা সাধারণ জাল ব্যবহার করি, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
বোদা উপজেলা থেকে আসা খগেন বলেন, গতকাল সন্ধ্যা থেকে জাল ফেলেছি, কিন্তু তেমন মাছ পাইনি। গতবার অনেক মাছ ধরেছিলাম, এবারে খুবই কম। রিং জাল ব্যবহারের কারণে মাছ কমে গেছে।
অন্যদিকে মাছ কিনতে আসা ওমর, রিপন ও আল আমীনসহ কয়েকজন ক্রেতা জানান, এবার এখানে মাছের দাম অনেক বেশি। সবচেয়ে খারাপ বিষয় হলো—রাস্তার ধারে যে মাছ বিক্রি হচ্ছে, সেগুলোর অনেকই এই নদীর নয়, বাইরে থেকে এনে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী যাকারিয়া বলেন, আমরা আশা করি, এই প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে মাছের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিডি-প্রতিদিন/মাইনুল