নির্বাচনি কার্যক্রম শুরু করেছে জুলাই বিপ্লবীদের আট মাস বয়সি রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। ব্যস্ত হয়ে উঠেছে বাংলামোটরের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। ৩০০ আসনে নির্বাচন করার লক্ষ্য নিয়ে প্রার্থী বাছাইকাজ শুরু করেছে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। এখন চলছে মনোনয়ন আবেদনপত্র বিক্রির কার্যক্রম। শেষ হবে ১৩ নভেম্বর। ১৫ নভেম্বর ঘোষণা করা হবে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা। তরুণ নেতারা বলছেন, প্রার্থী তালিকায় চমক দেখাবে এনসিপি।
দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশের নির্বাচনি সংস্কৃতিতে মনোনয়ন বাণিজ্যের যে সিন্ডিকেট, তা ভাঙতে চায় এনসিপি। সংসদে আমরা দলীয় এমপি নয়, জনতার এমপি পাঠাতে চাই। প্রতিটি আসনের জন্য এনসিপি সবচেয়ে সেরা প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেবে। এজন্য মনোনয়ন ফরম সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। এনসিপির প্রার্থীরা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের প্রথাগত রাজনীতিকে চ্যালেঞ্জ জানাবে। দুই দিনে অনলাইন-অফলাইনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। এনসিপি এবার সর্বোচ্চ মনোনয়ন ফরম বিক্রিরও রেকর্ড গড়বে।
দলীয় সূত্র জানায়, নির্বাচনি আমেজকে কাজে লাগিয়ে সারা দেশে সাংগঠনিক ভিত্তিটাও মজবুত করে নিতে চায় এনসিপি। মনোনয়ন ফরম ছাড়ার পর গত দুই দিনে অনলাইন-অফলাইন মিলিয়ে শতাধিক আবেদন পাওয়া গেছে। এত দিন ধরে দলের যেসব নেতা অনানুষ্ঠানিকভাবে আসনভিত্তিক প্রচারণা চালাচ্ছিলেন তারাও নিজ নিজ আসন কনফার্ম করে আবেদন জমা দিতে শুরু করেছেন।
জুলাই গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্র ও সংবিধান সংস্কার এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়ন রাজনীতির মুখ্য কর্মসূচিতে রেখেছে এনসিপি। দলটির একঝাঁক নেতা এরই মধ্যে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। দলীয় প্রতীক ‘শাপলা কলি’র পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। আনুষ্ঠানিক ঘোষণার দেরি থাকলেও দল থেকে এরই মধ্যে সফট সিগন্যাল পেয়েছেন এমনটি দাবি করছেন তারা। কেউ কেউ বক্তব্য, টক শোতে তার সম্ভাব্য আসনের কথাও প্রকাশ করছেন।
এদিকে বিএনপি-জামায়াত এই দুই বড় দলের সঙ্গে নির্বাচনি জোটে না যাওয়ার বিষয়ে নৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনসিপির নির্বাহী কাউন্সিল। গত সপ্তাহে দলের সর্বশেষ নির্বাহী কাউন্সিলের সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয়। সভায় অংশ নেওয়া নেতারা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপি-জামায়াত দুটি দলই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া নেতাদের দল এনসিপিকে তাদের সঙ্গে পেতে চায়। তাদের সঙ্গে জোট হলে কয়েকটি আসনে এনসিপি নেতারা জয় পেলেও এতে করে দলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মধ্যে পড়ার আশঙ্কা আছে। এতে করে দীর্ঘ মেয়াদে এনসিপির স্বতন্ত্র যে রাজনৈতিক সত্তা, তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এনসিপি তার স্বতন্ত্র অবস্থান ধরে রাখতে এককভাবে নির্বাচনের দিকে যাওয়া উচিত বলে নেতারা জোরালো মত দিয়েছেন।
দলের যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দীন সিফাত এ প্রসঙ্গে বলেন, তরুণদের রাজনৈতিক দল হিসেবে এনসিপিকে স্বতন্ত্রভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে বিএনপি-জামায়াত বৃত্তের বাইরে গিয়ে চিন্তা করতে হবে। পথটা কঠিন হলেও এতে করে এনসিপির নিজস্ব রাজনীতির শক্ত বয়ান তৈরি হবে। নির্বাচনের কঠিন চ্যালেঞ্জে জনগণের সামনে দাঁড়ানোর আগেই কোনো বড় দলের সঙ্গে মিলে নির্বাচনি বৈতরণীর জোটসঙ্গী হলে এনসিপির বুদ্ধিবৃত্তিক অকালমৃত্যু ঘটবে।