ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন নিয়ে ১১টি অসংগতি ও অনিয়মের অভিযোগ জানিয়েছে ছাত্রদলসমর্থিত আবিদ-হামিম-মায়েদ প্যানেল। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলনে প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান এসব অভিযোগ তুলে ধরেন।
অভিযোগগুলো হলো-
১. নির্দিষ্ট প্যানেলের পক্ষে ব্যালট পেপার সরবরাহ এবং ভোটার উপস্থিত হওয়ার আগেই তালিকায় উপস্থিতির স্বাক্ষর দেওয়াসহ নানান জালিয়াতির সংবাদ নির্বাচন চলাকালীন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ভোটার উপস্থিতি ও ভোট প্রদানের হারে অসামঞ্জস্যতা পরিলক্ষিত হওয়ায় ছাত্রদলসমর্থিত প্যানেলসহ অধিকাংশ প্যানেল এবং একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোটার উপস্থিতির তালিকা এবং ভোট কেন্দ্রের সিসিটিভি ফুটেজ চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর আবেদন করেছেন। ঢাবি প্রশাসন বারবার আশ্বাস দিলেও কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে কালক্ষেপণ করছে।
২. ২০১৯ সালের নির্বাচনে ব্যালট পেপারে ক্রমিক নম্বর না থাকায় ছাত্রলীগ কারচুপি করার সুযোগ পেয়েছিল। এবারও ক্রমিক নম্বর ছিল না। ছাপানো ব্যালট পেপার সংখ্যা, ভোট কেন্দ্রে সরবরাহ করা, ব্যবহৃত ও বাতিল হওয়া ব্যালট পেপারের সংখ্যা এবং ভোট গ্রহণ শেষে ফেরত ব্যালট পেপারের সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি। ফলাফল প্রকাশের পর উল্লিখিত অভিযোগগুলো চিফ রিটার্নিং অফিসার বরাবর দায়ের করতে গেলে তিনি ঢাবি প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। পরবর্তী সময়ে একাধিক প্রার্থী ও পোলিং এজেন্ট যথাযথ প্রক্রিয়ায় অভিযোগ দায়ের করলেও ঢাবি প্রশাসন তদন্তের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিয়ে নানা অজুহাতে কালক্ষেপণ করছে। ৩. ব্যবহৃত ব্যালট পেপার কোন প্রেসে ছাপানো হয়েছে, তা প্রকাশ করা হয়নি। অনিরাপদ ছাপাখানা থেকে ফাঁস হওয়া নকল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট কারচুপির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ৭ সেপ্টেম্বর নীলক্ষেতের গাউসুল আজম মার্কেটের একটি ছাপাখানায় বিপুলসংখ্যক ব্যালট পেপার অরক্ষিত অবস্থায় পাওয়া যায়।
৪. ডাকসু নির্বাচনের চার দিন পর ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাবি প্রশাসনের প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ভোট গণনা মেশিন এবং সফটওয়্যারের নির্ভুলতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাইয়ের সময় নির্দিষ্ট কয়েকজন শিক্ষক ও টেকনিশিয়ান উপস্থিত থাকলেও ভোটার ও প্রার্থীদের জানানো হয়নি।
৫. প্রত্যেক প্রার্থীর কাছ থেকে প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য একজন করে পোলিং এজেন্ট নেওয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেও ভোটের আগের দিন মধ্যরাতে পোলিং এজেন্টদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। যেখানে প্রার্থীদের প্রস্তাবিত বিভিন্ন কেন্দ্রের পোলিং এজেন্টদের বাদ দেওয়া হয়। কোন প্রক্রিয়ায় এজেন্টদের বাছাই করা হয়েছে, তা প্রকাশ করা হয়নি।
৬. পোলিং এজেন্টদের আইডি কার্ড সরবরাহ করার কথা থাকলেও তা যথাসময়ে করা হয়নি। যে কারণে অনেক পোলিং এজেন্ট ভোট কেন্দ্রে ঢুকতে পারেননি। অনেক কেন্দ্রে পোলিং এজেন্টের অনুপস্থিতিতে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ৭. একটি নির্দিষ্ট প্যানেল বাদে সব প্রার্থী ও প্যানেলকে ৮টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণের কথা জানানো হয়। ভোটের দিন দেখা যায়, ৮টি ভোটিং এরিয়ায় ১৮টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে। যে কারণে ওই নির্দিষ্ট প্যানেল ছাড়া আর কোনো প্রার্থী বা প্যানেল ১৮টি কেন্দ্র অনুসারে পোলিং এজেন্ট নিয়োগ করতে পারেনি। ৮. পোলিং অফিসার নিয়োগে অস্পষ্টতা রয়েছে। চিফ রিটার্নিং অফিসার পোলিং অফিসারদের নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও তাদের ঢাবি প্রশাসন নিয়োগ দিয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। আচরণবিধি সম্পর্কে ধারণা না থাকায় বেশির ভাগ পোলিং অফিসার সাংবাদিকদের ভুল তথ্য দিয়ে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ভুয়া অভিযোগ তুলে নির্বাচন প্রভাবিত করেছেন।
৯. ক্যাম্পাসের প্রবেশমুখে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কিছু বিএনসিসি, রোভার স্কাউট ও গার্লস গাইড সদস্যের সহায়তায় নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে অবাধে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। একাধিক বহিরাগত শিবির কর্মীকে শিক্ষার্থীরা হাতেনাতে ধরে প্রক্টর অফিসে সোপর্দ করেছেন।
১০. ভোট গণনার সময় পোলিং এজেন্টদের নিষ্ক্রিয় থাকতে বাধ্য করা হয়েছে। গণনা প্রক্রিয়ায় তাদের যথাযথভাবে যুক্ত না করা এবং গণনায় ত্রুটির প্রতিবাদে ছাত্রদলসমর্থিত প্যানেলসহ বেশির ভাগ প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট রেজাল্ট শিটে স্বাক্ষর না করে ভোট কেন্দ্র ত্যাগ করেন।
১১. অস্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ব্যবহার করায় বিভিন্ন অভিযোগ ও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বেশির ভাগ বুথে নির্বাচনের দিন বেলা সাড়ে ১১টার পর থেকে মার্কার পেন না থাকায় বলপেন দিয়ে ব্যালট পেপারে ক্রস চিহ্ন দিতে হয়েছে। বলপেনে ক্রস চিহ্ন দেওয়া ভোটগুলো ওএমআর মেশিন সঠিকভাবে রিড করতে পারেনি বলে অনেক ভোট গণনা করা হয়নি বলে পোলিং এজেন্টরা লক্ষ করেছেন। একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরের ভোটগুলোতে বলপেন ব্যবহার করে পরিকল্পিতভাবে ভোট নষ্ট করার হীন চেষ্টা ছিল কি না, তা নিয়ে অধিকাংশ প্রার্থীর মনে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ভোটার চিহ্নিত করার জন্য আঙুলে যে মার্কারের কালি ব্যবহার করা হয়েছে তা অস্থায়ী হওয়ায় একই ব্যক্তি একাধিক ভোট দিয়েছে কি না, সে বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
আবিদুল ইসলাম খান বলেন, বারবার প্রশাসনের কাছে এসব অভিযোগ তুলে ধরা হলেও তারা সেগুলো আমলে না নিয়ে কালক্ষেপণ করে।