ব্যবহারকারীদের আপত্তি উপেক্ষা করে গড়ে প্রায় ৪১ শতাংশ মাশুল বাড়িয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। রবিবার রাতে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন গতকাল থেকে কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, ১৯৮৬ সালে সর্বশেষ মাশুল নির্ধারণ করা হয়েছিল। এরপর প্রায় ৩৯ বছরে বন্দরের পরিচালন ব্যয়সহ বিভিন্ন খাতে খরচ বাড়ায় মাশুল বাড়াতে হয়েছে। তবে বন্দর লাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়ার পরও মাশুল বাড়ানোর প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই বিরোধিতা করে আসছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের ভাষ্য, এতে ব্যবসায়ী ও ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বেড়ে যাবে পণ্যের মূল্য। অবশ্য বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, বৃদ্ধির হার কম হওয়ায় সমস্যা হবে না।
ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। মাশুল বাড়ানোয় দেশের প্রধান এ রপ্তানিমুখী শিল্প ঝুঁকির মুখে পড়বে। তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ পরিচালক রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০ শতাংশ পাল্টা-শুল্ক আরোপের পর এমনিতেই পোশাক রপ্তানি সংকটের মুখে। তার ওপর বন্দর ও বেসরকারি ডিপো মাশুল বাড়ানোয় যে ব্যয় দাঁড়াবে, তাতে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাজারে টেকা যাবে না। এত দাম দিয়ে আমাদের পণ্য কিনবে না কেউ। সবাই যে যার মতো সেবামূল্য বাড়িয়ে দিচ্ছে। ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থ কেউই দেখছে না।’ চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, ‘দীর্ঘদিন বাড়ানো হয়নি, সেই হিসাবে বন্দর কর্তৃপক্ষ মাশুল কিছুটা বাড়াতে পারে। তবে সেটা যেন গ্রহণযোগ্য হয়। আমদানি-রপ্তানিতে যাতে চাপ তৈরি না করে- সেই অনুরোধ আমরা মন্ত্রণালয় ও বন্দর কর্তৃপক্ষকে করেছিলাম। তা উপেক্ষা করে একতরফাভাবে গড়ে ৪১ শতাংশ মাশুল বাড়ানো হয়েছে। এতে রপ্তানির পাশাপাশি ভোগ্যপণ্য ও শিল্পের কাঁচামালের আমদানি ব্যয় বেড়ে যাবে। কলকারখানার উৎপাদন ব্যাহত হবে। ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের দাম বাড়বে। সামগ্রিকভাবে দেশের ব্যবসাবাণিজ্যে পড়বে নেতিবাচক প্রভাব।’ চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘সিস্টেম আপগ্রেড করতে কিছুটা সময় লাগছে। মাশুল আগের চেয়ে গড়ে ৩৫-৪০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এ হার কিছুটা এদিক-ওদিক হতে পারে। আগে ১ কেজি ভোগ্যপণ্য আমদানিতে খরচ হতো ৩২ পয়সা। এখন হবে ৪৪ পয়সা। অর্থাৎ বেড়েছে ১২ পয়সা। এতে ভোক্তা পর্যায়ে তেমন প্রভাব পড়বে না।’ প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, প্রতিবার জাহাজ বন্দর এলাকায় প্রবেশের জন্য প্রতি টনে মোট দশমিক ৩০৬ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। পোর্ট লিমিটের মধ্যে লাইটার ও ট্যাংকারের ভ্যাসেল ওয়ার্কিং চার্জ ধরা হয়েছে প্রতি গ্রস টনে দশমিক ০১৭ ডলার। এর সঙ্গে ডেঞ্জারাজ গুডস ভ্যাসেলের ক্ষেত্রে ঘোষিত চার্জের ২৫ শতাংশ, ডেড ভ্যাসেলের জন্য ৫০ শতাংশ, লাইটারেজের জন্য ৫০ শতাংশ, ডিলে-ওভার স্টে চার্জ হিসেবে ৫ শতাংশ অতিরিক্ত মাশুল নির্ধারণ করা হয়েছে।
বন্দরে জাহাজ প্রবেশে জাহাজের প্রতি মুভমেন্টের জন্য সর্বনিম্ন পাইলটিং চার্জ ধরা হয়েছে ৮০০ ডলার। টাগ ব্যবহারের চার্জ হিসেবে প্রত্যেক মুভমেন্টে প্রতি ২০০ টন থেকে ৫ হাজার টনের জন্য কর্ণফুলী নদীর মধ্যে ৬১৫ ডলার ও বাইরে ১ হাজার ২৩০ ডলার নির্ধারণ করা হয়। এর বেশি সক্ষমতার টাগের চার্জও পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। বার্থ ওকুপেন্সি ০ দশমিক ০০৪ ডলার, বার্থিং-আনবার্থিং প্রতিবার ৯৪ দশমিক ৩২ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। সার্বিকভাবে খোলা পণ্য ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং খরচ আগের চেয়ে বেড়ে যাবে।