ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি ও সংবিধান সংস্কার পরিষদের নির্বাচনের ওপর জোর দিয়েছে গণসংহতি আন্দোলন। অন্যদিকে সংবিধান সংস্কার সভা ও আইনসভা নির্বাচন একসঙ্গে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সংস্কারের বিষয়ে মতামত দিয়েছে জেএসডি। গতকাল জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে গণসংহতি আন্দোলন ও জেএসডির বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে দুই দলের নেতারা এসব কথা বলেন। সকালের পর্বে বৈঠকে অংশ নেয় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির নেতৃত্বে ১০ সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধিদল। বিকালের পর্বে অংশ নেয় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি। দলটির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন এতে নেতৃত্ব দেন। কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় উভয় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান।
গণসংহতি আন্দোলন : বৈঠকে গণসংহতি আন্দোলনের পক্ষ থেকে আগামী নির্বাচনকে সংবিধান সংস্কার পরিষদের নির্বাচন হিসেবে সম্পন্ন করার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করা হয়। যেসব সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হবে, ১৫ জুলাইয়ের মধ্যেই সেসব বিষয় লিপিবদ্ধ করে জুলাই চার্টার ঘোষণার ব্যাপারে জোর দেন দলের প্রতিনিধিরা। জুলাই চার্টারের ভিত্তিতে সংবিধানসংক্রান্ত সংস্কারগুলোকে সংবিধান সংস্কার পরিষদের নির্বাচনের পর করা এবং অন্যান্য সংস্কারগুলোকে অধ্যাদেশের মাধ্যমে নির্বাচনের আগেই দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার আহ্বান জানান তারা। একই সঙ্গে সংস্কার প্রস্তাবগুলোর মধ্যে যেসব বিষয়ে সবার ঐকমত্য হবে না, সেগুলোকে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের রায় গ্রহণের জন্য নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আহ্বান জানানো হয় বৈঠকে।
জেএসডি : দেশের নাম পরিবর্তনের বিপক্ষে মতামত দিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি। যুক্তি দিয়ে দলটি জানিয়েছে, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত এবং স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বর্ণিত বাংলাদেশের নাম ৫৩ বছরে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। অনাবশ্যক নাম পরিবর্তনের কারণে বিতর্কের জন্ম দেবে, যা পরিহার করা জরুরি। এ ছাড়া সংবিধান সংস্কার সভা ও আইনসভা নির্বাচন একসঙ্গে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সংস্কারের বিষয়ে মতামত দিয়েছে দলটি। প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদে বিরোধীদলীয় নেতাকে দলীয় প্রধান না করার প্রস্তাব দেওয়ার কথা বলেছে। বৈঠক শেষে জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আংশিক একমত হয়েছি। প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগে আমাদের ভিন্নমত আছে। ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় ফ্যাসিবাদী শাসক পালাতে বাধ্য হয়েছে : জনসাধারণের ঐকবদ্ধ প্রচেষ্টায় ফ্যাসিবাদী শাসক পলায়নে বাধ্য হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। সকালে গণসংহতি আন্দোলন ও বিকালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)-এর সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপের শুরুতে তিনি এসব কথা বলেন। সংস্কার কমিশনগুলোর প্রস্তাবের বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে যে পুঞ্জীভূত সংকট মোকাবিলা করার চেষ্টা, সেখানে শুধু সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন বাস্তবায়ন যথেষ্ট নয়, সেজন্য দরকার একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কাঠামো তৈরি করা, গণতন্ত্রের চর্চা করা, গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে একত্রিত থাকা।