কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার সঙ্গে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে বলেছিলেন তিনি। জবাবে মোদি বলেছিলেন, তিনি এটি পারবেন না। কারণ ভারতের সবাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে। এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। অর্থাৎ শেখ হাসিনা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে কিছু বললে, সেটি তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। গতকাল আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম আলজাজিরায় বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার এই দীর্ঘ ভিডিও সাক্ষাৎকারটি সম্প্রচার করা হয়েছে। সাক্ষাৎকারে জুলাই বিপ্লব, সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়া, সাবেক সরকারের দুর্নীতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকারে আলজাজিরার সাংবাদিক নিয়েভ বার্কার শেখ হাসিনাকে নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। তখন তার বিভিন্ন বক্তব্য ও বিবৃতি দেওয়ার বিষয়টি উঠে আসে। আলজাজিরার সাংবাদিক বলেন, ‘শেখ হাসিনা দাবি করেন তিনি এখনো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তিনি ভারত থেকে এসব বিবৃতি দিচ্ছেন। অন্তর্বর্তী সরকার ভারতে তার অবস্থানকে কীভাবে দেখে?’ জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ‘ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলন হয়েছিল। যেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ বিমসটেকভুক্ত দেশের সব সরকারপ্রধান এসেছিলেন। তার সঙ্গে আমার কথা হয় এবং আমি তাঁকে স্পষ্ট করি, ঠিক আছে, যদি শেখ হাসিনাকে আপনি রাখতে চান। তাহলে এ বিষয়ে আপনার সঙ্গে আমি কিছু করতে পারব না। কিন্তু অবশ্যই তিনি যখন সেখানে থাকবেন, তার কথা বলা উচিত হবে না। কারণ তার বক্তব্য আমাদের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করে। তিনি বক্তব্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে উত্তেজিত করেন। আর এজন্য আমাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।’ আলজাজিরার সাংবাদিক তখন জিজ্ঞেস করেন ‘মোদি কী বলেছিলেন?’ জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ‘তিনি বলেছিলেন, ভারত হলো এমন দেশ যেখানে সামাজিক মাধ্যম সবার জন্য উন্মুক্ত। আমি এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না।’
দেশে ফিরলেন প্রধান উপদেষ্টা : কাতারের দোহায় আর্থনা সম্মেলন ও ভ্যাটিকান সিটিতে পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগদান শেষে গত রাতে দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছয় দিনের এ রাষ্ট্রীয় সফরে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, মন্ত্রী, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী নেতা, বিনিয়োগকারী, ধর্মযাজক, প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটি ও তরুণ সমাজের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। অংশ নিয়েছেন একাধিক সভা-সেমিনারে। আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশে বিনিয়োগের। তুলে ধরেছেন রোহিঙ্গা সংকট। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন কাতারের প্রধানমন্ত্রীসহ বিশ্বনেতারা। আর্থনা সম্মেলনে যোগ দিতে গত ২১ এপ্রিল কাতার যান প্রধান উপদেষ্টা। সেখান থেকে ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে শুক্রবার ছুটে যান ইতালির রোমে।
শনিবার ভ্যাটিকান সিটির সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে হয় পোপের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠান। গতকাল বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টার দিকে প্রধান উপদেষ্টা দেশের উদ্দেশ্যে রোম ত্যাগ করেন। চার দিনের কাতার সফরে ড. ইউনূস দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান বিন জসিম আল থানি, কাতারের আমিরের মা এবং কাতার ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন শেখ মোজা বিনতে নাসের, কাতার ফাউন্ডেশনের সিইও শেখ হিন্দ বিনতে হামাদ আল থানি, কাতারের জ্বালানিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী, প্রতিরক্ষাবিষয়ক মন্ত্রী, কাতার চ্যারিটির আন্তর্জাতিক অপারেশনস সেক্টরের সহকারী প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নওয়াফ আবদুল্লাহ আল হাম্মাদি, স্পেসএক্সের গ্লোবাল এনগেজমেন্ট বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট লরেন ড্রেয়ারসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে।