গ্রিসে বাংলাদেশিদের পথচলা মাত্র সাড়ে ৩ দশকের। গত দেড় দশক ধরে তারা এখানে মিনি মার্কেট, রেস্টুরেন্টের পাশাপাশি গার্মেন্ট শিল্পে নিজেদের জড়িয়েছেন।
গ্রিসের প্রায় শতভাগ গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি এখন বাংলাদেশি মালিকানাধীন। দাদন মৃধা নামের এক গার্মেন্ট ব্যবসায়ী বলেন, গ্রিসে প্রায় ৩০০ গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি বাংলাদেশি মালিকানাধীন। আমাদের বায়ার গ্রিসের নামিদামি ব্র্যান্ড। আবদুস সালাম নামের আরেক গার্মেন্ট ব্যবসায়ী বলেন, আমরা এই বিজনেসে আসার আগে এটি পুরোটা নিয়ন্ত্রণ করত গ্রিক ও পরে অ্যারাবিয়ানরা। এখন পুরোটা বাংলাদেশিদের হাতে। তিনি ১৯৯৫ সালে মাদারীপুরের শিবচর থেকে গ্রিসে আসেন। প্রথমে গ্রিকদের সঙ্গে কাজ করে সুপারভাইজার হয়েছিলেন। তিনি জানান, বাংলাদেশিরা ২০০৩ সাল থেকে সরাসরি গার্মেন্ট বিজনেসে যুক্ত হন। দাদন মৃধা ২০০৬ সালে প্রথম শুরু করেন গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি। গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে কাজ করা সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার সালেহ মিয়া জানান, তিনি প্রতি মাসে ১ হাজার ২০০ পাউন্ড আয় করেন।
তিনি জানান, অনেকেই মাসে ২ হাজার ইউরো পর্যন্ত আয় করছেন। গ্রিসের গার্মেন্ট ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে, প্রতিবছর গ্রিক ইকোনমিতে বাংলাদেশিদের গার্মেন্ট সেক্টর থেকে অন্তত ৪০০-৫০০ মিলিয়ন ইউরো অবদান রাখে।
মিনি মার্কেটের বিশাল সেক্টর বাংলাদেশিদের হাতে : ইঞ্জিনিয়ার জয়নাল আবেদিনের হাত ধরে গ্রিসে প্রথম শুরু হয় মিনি মার্কেট। এখন এই গ্রিসে গত ৩০ বছরে অন্তত ৪০০ মিনি মার্কেটের মালিকানা বাংলাদেশিদের হাতে। মিনি মার্কেট হচ্ছে বাংলাদেশে গলির মুখে যে ডেইলি নিডস বা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মুদি দোকান সে রকম। তবে অনেকেই আবার মিনি মার্কেটে ফ্রোজেন মাছ কাটার ব্যবস্থা রাখেন। বিক্রমপুরের তপন মৃধা ১৮ বছর আগে এলেও প্রথমে গার্মেন্টে ১ বছর চাকরি করেন। এরপর তিনি একটি মিনি মার্কেটে চাকরি শুরু করেন। সেখান থেকে প্রথমে অন্য মিনি মার্কেটে নানা পণ্য সাপ্লাইয়ের কাজ করতে করতে এক সময় বাংলাদেশিদের গলি নামে পরিচিত ওয়ানিয়ার গেরিনিয়াতে ৭০ হাজার ইউরো দিয়ে বেশ বড় একটি দোকান নিয়ে শুরু করেন নিউ এশিয়ান মিনি মার্কেট। গ্রিসে ৩৫ বছর ধরে বসবাসকারী সিলেট সদরের বাসিন্দা সামশুল আলম বলেন, গ্রিসের রাজধানী এথেন্সের এই ওমানিয়া এলাকা প্রাচীন গ্রিস থেকেই সেন্ট্রাল পজিশনের জায়গা। এখান থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দার্শনিক সক্রেটিসের বাড়ি মাত্র ১০ মিনিটের পথ।
বাংলাদেশিদের লাশ পাঠাতে ঐক্যবদ্ধ কমিউনিটি : ইউরোপে অন্য দেশের তুলনায় গ্রিসে বাংলাদেশিদের মৃত্যুহার অনেক বেশি। গত আট বছরে ৩ শতাধিক বাংলাদেশি মৃত্যুবরণ করেছেন গ্রিসে। এর মধ্যে ৩০০ একেবারেই শ্রমিক, যাদের পরিবার বাংলাদেশ থেকে হাসপাতালের বিল দিয়ে লাশ ছাড়িয়ে নেওয়ার খরচ বহন করার সামর্থ্য নেই। গ্রিস বাংলাদেশি কমিউনিটির উদার সহযোগিতায় গত আট বছরে এই ৩০০ লাশ বাংলাদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা হয়েছে। গ্রিসের সাংবাদিক মতিউর রহমান মুন্না জানান, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হওয়ায় বেশির ভাগ ব্যক্তি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত ও হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। বর্তমানে গ্রিসে বৈধভাবে আসার সুযোগ তৈরি হয়েছে। তাই কাজের ক্ষেত্রে নিশ্চিত না হয়ে গ্রিসে না আসার আহ্বান জানান তিনি।