জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহীদ জসিম উদ্দিনের কন্যা লামিয়া ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর আত্মহত্যা করেছেন। গত শনিবার রাতে রাজধানীর শেখেরটেক এলাকার ৬ নম্বর রোডের বি/৭০ নম্বর বাড়ি থেকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়। এদিকে জুলাই গণ অভ্যুত্থানে ঢাকায় শহীদ হওয়া পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার জসিম উদ্দিনের মেয়ে লামিয়াকে বাবার কবরের পাশেই দাফন করা হয়। গতকাল দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে তার লাশ গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হয়। বাদ আসর দুমকী উপজেলার পাংগাশিয়া ইউনিয়নে জানাজা শেষে লাশ দাফন করা হয়। জানা গেছে, লামিয়া ঢাকায় পড়াশোনা করতেন। গত ১৮ মার্চ পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার পাংগাশিয়া ইউনিয়নে নিজ বাড়ি থেকে নানা বাড়ি যাওয়ার পথে তিনি সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। ঘটনার পর তিনি থানায় গিয়ে ধর্ষকদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন এবং দুমকী থানা পুলিশ ধর্ষণ মামলার আসামি সাকিব ও সিফাতকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেছে। পরিবারের দাবি, ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর থেকেই লামিয়া মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছিলেন। সামাজিক লজ্জা, অবহেলা এবং ন্যায়বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা তার মধ্যে চরম হতাশা তৈরি করে। হতাশা থেকেই তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন। এদিকে লামিয়ার ধর্ষণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ। গতকাল বিকালে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন আল্লাহ করিম মসজিদের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে সংগঠনটির নেতারা এ দাবি জানান।
লামিয়ার শোকাহত পরিবারের পাশে তারেক রহমান : চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে শহীদ জসিম উদ্দিনের কন্যা লামিয়া আক্তারের শোকাহত পরিবারের পাশে দাঁড়াতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারেক রহমান পটুয়াখালীর দুমকীতে প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও আমরা বিএনপি পরিবারের প্রধান উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে গতকাল বিকালে প্রতিনিধিদলটি পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার দক্ষিণ পাঙ্গাসিয়া ইউনিয়নের নলদোয়ানী গ্রামে যায়। এ সময় লামিয়া আক্তারের পরিবারের প্রতি তারেক রহমানের সহমর্মিতার বার্তা পৌঁছে দেন রিজভী। পাশাপাশি শহীদ জসিম উদ্দিনের বৃদ্ধ বাবা সোবহান হাওলাদারের (লামিয়া আক্তারের দাদা) হাতে আর্থিক সহায়তা তুলে দেন তিনি। তারেক রহমানের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক ও বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমন, ওই সংগঠনের উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা-ই জামান সেলিম, সদস্যসচিব কৃষিবিদ মোকছেদুল মোমিন মিথুন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের স্থায়ী সদস্য জাহিদুল ইসলাম রনি ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আমানউল্লাহ আমান।
স্থানীয় স্কুল মাঠে গতকাল রাত পৌনে ৮টায় লামিয়া আক্তারের জানাজায় রিজভীর নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলটি অংশ নেয়। লামিয়া আক্তারের জানাজা শেষে চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে শহীদ জসিম উদ্দিনের কবর জিয়ারত করে প্রতিনিধিদলটি।
প্রসঙ্গত শনিবার রাত ১০টার দিকে রাজধানী ঢাকায় শেখেরটেকের ৬নং রোডের ভাড়া বাসা থেকে লামিয়া আক্তারকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মোহাম্মদপুর শাখার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম রাব্বী বলেন, কিছুদিন আগে শহীদ জসিম উদ্দিনের মেয়ে লামিয়া গণধর্ষণের শিকার হন। লামিয়াকে ধর্ষণের একটি ভিডিও ফুটেজ গ্রেপ্তার আসামিদের কাছে আছে। কিন্তু সেই ফুটেজ এতদিনেও সংগ্রহ করতে পারেনি উপদেষ্টারা। এমনকি ওই ধর্ষকদেরও বিচার তারা এখনো করতে পারেনি। যেই উপদেষ্টারা জসিম ভাইয়ের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে উপদেষ্টা হয়েছেন, তারা এখন পর্যন্ত ওই ধর্ষণকারীদের বিচার করতে পারেননি। তিনি আরও বলেন, কিছুদিন আগে আছিয়া ধর্ষণের শিকার হয়ে মারা গেছে, তখন দেশের বিপ্লবী ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে এসেছিল। তখন বিভিন্ন উপদেষ্টা আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন, খুব তাড়াতাড়ি বিচার হবে। কিন্তু যখনই আমরা আন্দোলন থেকে সরে গিয়ে ফিলিস্তিনের বিষয়ে আন্দোলনে নামলাম, তখনই দেখলাম ধর্ষকদের বিচারকাজ চাপা পড়ে গেল। উপদেষ্টাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যদি আপনারা ধর্ষকদের বিচার করতে পারেন করেন, তা না হলে আমাদের (জনগণ) মাঝে ছেড়ে দেন। আমরা তাদের বিচার করব। আপনারা ধর্ষকদের বিচার করতে না পারলে পদ থেকে সরে যান। এ সময় সমাবেশ থেকে ‘ধর্ষকদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘ধর্ষকদের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না’, ‘একটা একটা ধর্ষক ধর, ধইরা ধইরা জেলে ভর’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিজ’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।