সিলেট থেকে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের দূরত্ব ৩৬০ কিলোমিটার। বাংলাদেশের দুই বিভাগীয় শহর। ভূ-বৈচিত্র্য রয়েছে দুই শহরের। পার্থক্য রয়েছে আবহাওয়ায়, মাটির আচরণে। সিলেটের মাটি লাল ও শক্ত এবং চট্টগ্রামের মাটি একটু শুষ্ক। মাটির আচরণগত পার্থক্য ও আবহাওয়ার তারতম্য থাকায় দুই শহরের ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উইকেটের আচরণেও পার্থক্য দৃষ্টিমান। সিলেটের উইকেটে বাউন্স বেশি। টার্নও রয়েছে। ব্যাটাররা স্ট্রোক খেলেন স্বাচ্ছন্দ্যে। দেশের একমাত্র স্পোর্টিং উইকেট। চট্টগ্রামের উইকেটে ব্যাটাররা সুবিধা পেলেও স্পিনারদের স্বর্গ। এ মাঠে সর্বশেষ যে টেস্ট হয়েছে গত অক্টোবরে। দক্ষিণ আফ্রিকা জিতেছিল স্পিন ঘূর্ণিতে। চট্টগ্রামে ২৫ টেস্ট খেলে বাংলাদেশ জিতেছে সাকল্যে দুটি। দুটিই জিতেছে স্পিন ভেলকিতে। অবশ্য ব্যাটাররা রান করেছেন। সেঞ্চুরি করেছেন। তবে মূল নায়ক স্পিনাররা। সিলেটে সফরকারী জিম্বাবুয়ের কাছে হেরে সিরিজ হারের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে টাইগাররা। চট্টগ্রামে জিততে মরিয়া নাজমুল বাহিনী একাদশ সাজাচ্ছে স্পিন প্রাধান্যে। একাদশে হয়তো দেখা যাবে মেহেদি হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলামের সঙ্গে নাঈম হাসান কিংবা তানভীর ইসলামকে।
সকাল ৯টায় শুরু হবে টেস্ট। গতকাল শেষবারের মতো অনুশীলন করেন নাজমুলরা। অনুশীলনের ফাঁকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে চট্টগ্রামের উইকেট দেখেন অফ স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। সিলেটে ১০ উইকেট শিকারি মিরাজ যখন উইকেট দেখছিলেন, তখন পাশে দাঁড়িয়েছিলেন হেড কোচ ফিল সিমন্স। এরপর দুজনে উইকেট নিয়ে কথা বলতে বলতে সাজঘরে ফেরেন। মিডিয়ার মুখোমুখিতে টাইগার কোচ স্বীকার করেন উইকেটে স্পিন ধরবে। তিনি বলেন, ‘উইকেট খুবই ভালো মনে হচ্ছে। বেশ শক্ত, মসৃণ এবং কিছুটা শুষ্ক। ম্যাচের পরের দিকে কিছুটা টার্ন আশা করতে পারি। যা আমাদের জন্য সুবিধাজনক হতে পারে।’ সফরকারী জিম্বাবুয়ের স্কোয়াডেও পরিবর্তন আসতে পারে। দেখা মিলতে পারে বাড়তি স্পিনার। সফরকারী অধিনায়কও স্বীকার করেছেন উইকেটে স্পিন ধরবে, ‘নেটের উইকেটগুলো আমাদের কাছ কিছুটা মন্থর মনে হয়েছে। খেলা যত এগোবে, হয়তো স্পিন বেশ বড় ভূমিকা রাখবে এ টেস্টে।’
সিলেটে দুটি টেস্ট জিতেছে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ফ্লাইট লে. মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে টেস্ট খেলেছে একটি। ২০১৪ সালের টেস্টটি বাংলাদেশ জিতেছিল ১৮৬ রানের পাহাড়সমান ব্যবধানে। ওই টেস্টে টাইগারদের পক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস ও মুমিনুল হক। অথচ দলটিকে জিতিয়েছিলেন স্পেশালিস্ট লেগ স্পিনার জুবায়ের হোসেন লিখন। যদিও তিনি এখন ক্রিকেটে নেই। কোনো খোঁজ নেই জুবায়েরের। ওই টেস্টে তিনি উইকেট নিয়েছিলেন ৭টি (৫ ও ২টি)। ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৬৪ রানে জয়ী টাইগার একাদশে ছিলেন চারজন স্পিনার সাকিব, মিরাজ, তাইজুল ও নাঈম। ক্যারিবীয়দের দুই ইনিংসের ২০ উইকেটের সবই নিয়েছিলেন চার স্পিনার। এবারও জিম্বাবুয়েকে গুঁড়িয়ে দিতে একাদশে স্পিন আধিক্য দেখা যাবে কোনো সন্দেহ নেই।
সিলেটে ব্যাটিং ব্যর্থতায় নাজমুল বাহিনী হেরেছে ৩ উইকেটে। জিম্বাবুয়ের পেসার ও স্পিনারদের দাপুটে গোটা টেস্টে ৩টি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন ব্যাটাররা। প্রথম ইনিংসে মুমিনুল এবং দ্বিতীয় ইনিংসে অধিনায়ক নাজমুল ও জাকের আলি অনিক হাফ সেঞ্চুরি করেন। এ ছাড়া বড় কোনো জুটি ছিল না। ব্যাটিং ব্যর্থতা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে টিম ম্যানেজমেন্ট দলে ভিড়িয়েছে ব্যাটিং ছন্দে থাকা এনামুল হক বিজয়কে। ২০১৩ সালে অভিষেক এনামুল হক বিজয়ের। অথচ গত এক যুগে বিজয় টেস্ট খেলেছেন মাত্র ৫টি। সর্বশেষ টেস্ট খেলেছেন ২০২২ সালের জুনে। তাকে হঠাৎ করেই স্কোয়াডে নেওয়া হয়েছে। ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে ৪টি সেঞ্চুরি করে ছন্দে থাকা এনামুল খেলতেও পারেন টেস্টে। ‘স্পিড স্টার’ নাহিদ রানা না থাকায় অভিষেক হতে পারে আরেক পেসার তানজিম সাকিবের। এনামুলের হঠাৎ ডাক পাওয়াকে ইতিবাচক মনে করেননি টাইগার কোচ। তিনি বলেন, ‘এটা আদর্শ পদ্ধতি নয়। কিন্তু বাংলাদেশে টুর্নামেন্টগুলো যেভাবে সাজানো, আপনার চার দিনের টুর্নামেন্ট বছরের শেষের দিকে। এখন ডিপিএলের সময়, এখানে আমাদের পছন্দের কোনো সুযোগ নেই। আমরা জানি, উদ্বোধনী জুটি বেশ অনেকটা সময় ধরেই আমাদের জন্য সমস্যার কারণ।’