ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটক হত্যার ঘটনা কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের উত্তেজনায় নতুনত্ব যোগ হয়েছে। হঠাৎ করেই পানিযুদ্ধ শুরু করেছে ভারত। সিন্ধু নদের পানি আটকে দেওয়ার উদ্যোগের পাশাপাশি পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের অন্যতম প্রধান নদী ঝিলামের পানি ছেড়ে দিয়েছে ভারত। এতে সেখানে মাঝারি ধরনের বন্যার সৃষ্টি হয়েছে এবং পানিতে ডুবে গেছে বিস্তীর্ণ অঞ্চল। এ অবস্থায় কাশ্মীরে জরুরি অবস্থা জারি করতে হয়েছে। সূত্র : রয়টার্স, আলজাজিরা, এএফপি, এনডিটিভি, ডন। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরাবাদের বিভাগীয় প্রশাসন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, পাকিস্তানকে অবহিত না করেই ভারত ঝিলাম নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ছাড়ছে। এতে সেখানে হঠাৎ বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। হু হু করে পানি বাড়ছে এবং বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, বন্যার বিষয়ে সতর্ক করতে মসজিদ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। এভাবে চারদিক তলিয়ে যেতে থাকায় নদীপাড়ের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এ পানি ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের অনন্তনাগ থেকে পাকিস্তানের চাকোঠি দিয়ে প্রবেশ করছে। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, এরই মধ্যে পাকিস্তানের সঙ্গে থাকা সিন্ধু নদের পানিচুক্তি স্থগিত করেছে নয়াদিল্লি। ভারত হুমকি দিয়ে বলেছে, পাকিস্তানকে সিন্ধু নদের এক ফোঁটা পানিও দেওয়া হবে না। ভারতের জলশক্তিমন্ত্রী সিআর পাতিল জানান, পাকিস্তানে ভারত থেকে নদীর এক ফোঁটা পানিও যেন না যায় সেই ব্যবস্থা নিচ্ছেন তারা। তিনি এক্সে লিখেছেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকে একটি রোডম্যাপ প্রস্তুত করা হয়েছে। বৈঠকে তিনটি অপশন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সরকার স্বল্পকালীন, মধ্যকালীন এবং দীর্ঘকালীন ব্যবস্থার ওপর কাজ করছে- যেন পাকিস্তানে এক ফোঁটা পানিও না যায়। শিগগিরই নদীর প্রবাহ বন্ধ করতে ড্রেজিং কাজ সম্পন্ন হবে এবং প্রবাহ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হবে।’ অন্যদিকে পাকিস্তান বলেছে, সিন্ধুর প্রবাহ আটকানোর চেষ্টা করা হলে এটিকে তারা যুদ্ধের কর্মকাণ্ড হিসেবে বিবেচনা করবে। আর সেই অনুযায়ী (সামরিক) ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে ভারতীয় পদক্ষেপের বিষয়ে সিন্ধু নদ এলাকার বাসিন্দা পাকিস্তানের কৃষক হোমলা ঠাকুর (৪০) গণমাধ্যমকে জানান, তিনি তার ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। একদিকে সূর্যের প্রখর তাপ, আরেক দিকে নদীর পানি কমে যাচ্ছে। যদি তারা পানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়, তাহলে পুরো এলাকা, পুরো দেশ মরুভূমিতে পরিণত হবে।’
আবারও গোলাগুলি : ভারত ও পাকিস্তানি সেনাদের মধ্যে নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) গত শনিবার দিবাগত রাতেও গোলাগুলি হয়েছে। এ নিয়ে ধারাবাহিকভাবে তৃতীয় রাতের মতো গোলাগুলি হলো। গতকাল ভারতীয় সেনাবাহিনী দাবি করেছে, নিয়ন্ত্রণরেখায় পাকিস্তানি সেনারা বিনা উসকানিতে গুলি ছুড়েছে। জবাবে ভারতীয় সেনারা পাল্টা গুলি ছুড়েছে।
ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা : পাকিস্তানের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার মধ্যে আরব সাগরে একাধিক অ্যান্টি-শিপ (জাহাজ বিধ্বংসী) ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনী। সামরিক প্রতিবেদনে বলা হয়, আরব সাগরে মোতায়েন ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ থেকে ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্রসহ ভূমি বিধ্বংসী ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের একাধিক দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেছে নৌবাহিনী।
বাড়াবাড়ি করলেই আঘাত : পেহেলগাম হামলার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের তৎপরতা নিয়ে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানের রেলমন্ত্রী হানিফ আব্বাসি। এক হুঁশিয়ারি বার্তায় তিনি বলেছেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোনো বাড়াবাড়ি করলেই আঘাত করা হবে। ভারতকে চরম মূল্য দিতে হবে।
বাঙ্কার পরিষ্কারে নেমেছেন গ্রামবাসী : ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের সীমান্তবর্তী গ্রাম আরএস পুরাতে যুদ্ধের শঙ্কায় সামরিক বাঙ্কার পরিষ্কার করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এক সাক্ষাৎকারে স্থানীয় বাসিন্দা বালবীর কৌর বলেন, ‘আমরা সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা। ভারতে যাই ঘটুক না কেন, তার প্রভাব আগে এসে পড়ে আমাদের ওপর। তাই আমরা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছি, যাতে কিছু ঘটলে সরকারের চিন্তা না করতে হয় আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে।