খুলনা, যশোর, বরিশাল ও ফরিদপুরসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় ২৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় বিদ্যুতের ব্ল্যাকআউটের ঘটনায় আট সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আর এ কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। গতকাল সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এই ব্ল্যাকআউটের প্রাথমিক কারণ হিসেবে জানায়, আমিনবাজার উপকেন্দ্র থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার দূরে এবং গোপালগঞ্জ উপকেন্দ্র থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে দুই লাইনের শর্টসার্কিটের কারণে উভয় প্রান্ত থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে শনিবার বিকাল ৫টা ৪৫ মিনিটে দেশের খুলনা, যশোর, ফরিদপুর ও বরিশাল এলাকায় বিদ্যুতের ব্ল্যাকআউটের ঘটনা ঘটে। এর কিছুক্ষণ পর থেকে পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল হতে শুরু করে। মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, এদিন ৪০০ কেভি আমিনবাজার-গোপালগঞ্জ ডাবল সার্কিট লাইনে সংঘটিত ফল্টের কারণে খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলের ১০ জেলায় ব্ল্যাকআউট হয়। তবে ঘটনার আগে বিকাল ৫টায় মোট জেনারেশন ছিল ১৪ হাজার ৫২০ মেগাওয়াট এবং সিস্টেম ফ্রিকোয়েন্সি ছিল ৫০ দশমিক ৪ হার্জ। এ অবস্থায় বিকাল ৫টা ৪৫ মিনিটে ৪০০ কেভি আমিনবাজার-গোপালগঞ্জ ডাবল সার্কিট লাইনে ফল্ট হওয়ায় খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলের যশোর, বেনাপোল ও নোয়াপাড়া উপকেন্দ্র সংশ্লিষ্ট ১০টি জেলায় বিদ্যুৎ বিচ্যুতি হয়। তবে ২৩০ কেভি ঈশ্বরদী-ভেড়ামারা-ঝিনাইদহ লিংকটি চালু থাকায় ২৩০ কেভি এবং ১৩২ কেভি লেভেলে সংযুক্ত ভেড়ামারা, কুষ্টিয়া, মাগুরা, নড়াইল, চুয়াডাঙ্গা উপকেন্দ্রসমূহ চালু ছিল। এই ২৩০ কেভি লিংক ব্যবহার করে পাওয়ার এনএলডিসি এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তরের তাৎক্ষণিক চেষ্টায় যশোর, বেনাপোল, নোয়াপাড়া উপকেন্দ্রগুলো চালু করা হয়। এতে এসব এলাকায় বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
অন্যদিকে ৪০০ কেভি আমিনবাজার-গোপালগঞ্জ ডাবল সার্কিট লাইনের সংঘটিত ফল্টে ১৩২০ মেগাওয়াট বিসিপিসিএল (পায়রা), ১৩২০ মেগাওয়াট আরএনপিএল, ৩০৭ মেগাওয়াটের বরিশাল ইলেকট্রিক, ১৩২০ মেগাওয়াটের রামপাল, ২২৫ মেগাওয়াটের ভোলা নতুন বিদ্যুৎ ও ২২৫ মেগাওয়াটের ভোলা বিদ্যুৎ কেন্দ্রসমূহ এবং ৫০০ মেগাওয়াটের এইচভিডিসি ব্লক-২ ট্রিপ করে। এতে প্রায় ২ হাজার ২২৭ মেগাওয়াট বিদ্যুতের বিচ্যুতি ঘটে। পরে সন্ধ্যা ৬টা ১৯ মিনিটে ৪০০ কেভি আমিনবাজার-গোপালগঞ্জ ডাবল সার্কিট-১ এবং ৬টা ২৫ মিনিটে সার্কিট-২ চালু করা হলে ৪০০ কেভি আমিনবাজার-গোপালগঞ্জ-আমতলী লিংকটি সচল হয়। রাত ৯টায় বিদ্যুৎ পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়। ব্ল্যাকআউটের কারণ জানতে বিদ্যুৎ বিভাগ ছাড়াও পিজিসিবি থেকে আরেকটি কমিটি করে বিষয়টি অনুসন্ধান করা হবে। তবে এ ঘটনা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানতে পারেননি বিদ্যুৎ উপদেষ্টা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে বিষয়টি জানতে পারায় তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন। ফাওজুল কবির খান বলেন, ব্ল্যাকআউটের কারণে মোট সাতটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ভবিষ্যতে এরকম ঘটনা ঘটলে দ্রুত মিডিয়ার মাধ্যমে জনগণকে জানাতে হবে। মন্ত্রণালয়ের এ বিষয়ে গঠিত কমিটি গ্রিড বিপর্যয়ে কারণ নির্ণয়, এজন্য দায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা, ভবিষ্যতে গ্রিড বিপর্যয় রোধে সুপারিশ তৈরি করবে। আট সদস্যের যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে সেখানে আহ্বায়ক হিসেবে আছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপ-উপাচার্য আবদুল হাসিব চৌধুরী। সদস্যদের মধ্যে আছেন বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. এহসান। খুলনার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) মো. ফিরোজ শাহ। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সদস্য (পিঅ্যান্ডডি) মো. শহীদুল ইসলাম। ওজোপাডিকোর প্রধান প্রকৌশলী (পরিচালন) মো. আবদুল মজিদ। বাবিউবোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আতিকুর রহমান। পিজিসিবির প্রধান প্রকৌশলী, ট্রান্সমিশন-১ মোহাম্মদ ফয়জুল কবির এবং সদস্যসচিব হিসেবে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সহকারী মো. মাজহারুল ইসলাম।