সমাজে বহুকাল ধরে চলে আসা এক প্রবণতা- নারীকে তার বাহ্যিক সৌন্দর্যের মানদণ্ড দিয়ে বিচার করা। এর সর্বশেষ পরিণতি- নারীর মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি। তাই তো দিন দিন নারীরা আরও বেশি করে কৃত্রিম সৌন্দর্যের প্রতি ঝুঁকে পড়ছেন, যার মাত্রাও উদ্বেগজনক। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, যেসব নারী মনে করেন যে তাদের চেহারার কারণে অন্যরা তাদের সম্পর্কে ভালো ধারণা পোষণ করে না, তারা একসময় বিষণ্নতায় ভুগতে শুরু করেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, চেহারা নিয়ে এই উদ্বেগ এখন কেবল শহুরে বা শিক্ষিত সমাজেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং বিশ্বায়নের প্রভাবে এটি গ্রামীণ পরিবেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। সৌন্দর্যের এই মাপকাঠি সমাজে নারীর আত্মবিশ্বাস ও ভাবমূর্তিকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করে।
সৌন্দর্যের মানদণ্ড ও নারীর চাপ
নারীর সৌন্দর্য নিয়ে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি নতুন কিছু নয়। যুগে যুগে নারীকে তার চেহারা ও শারীরিক অবয়ব দিয়ে বিচার করা হয়েছে। এই চাপ কেবল শহুরে বা শিক্ষিত সমাজে সীমাবদ্ধ নয়, গ্রামাঞ্চলেও পৌঁছে গেছে সৌন্দর্যের এই বিশ্বায়িত মানদণ্ড। ফলাফল- মানসিক অস্থিরতা, আত্মসম্মানহানি, সম্পর্ক এড়িয়ে চলা, ক্রমাগত অন্যের সঙ্গে তুলনা, এমনকি বিষণ্নতা পর্যন্ত। মনোবিশেষজ্ঞরা বলেন, যারা মনে করেন তাদের চেহারার জন্য অন্যরা নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে, তারা দীর্ঘমেয়াদে মানসিক সমস্যায় ভোগেন।
প্লাস্টিক সার্জারির উত্থান
চেহারার ত্রুটি ঢাকা বা নিজের মতো করে সুন্দর হয়ে ওঠার চাবি এখন অনেক নারীর হাতেই- প্লাস্টিক ও কসমেটিক সার্জারি। লাইপোসাকশন, বোটক্স, ফিলার, স্কিন টাইটেনিং, জ-লাইন স্কাল্পটিং থেকে শুরু করে ব্রেস্ট অগমেন্টেশন বা লিপ প্লাম্প-সবই এখন হাতের নাগালে। সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে ‘আগে-পরে’ ছবি দেখে অনেক নারী মনে করেন, প্রাকৃতিক চেহারা যথেষ্ট নয়। বোস্টন ইউনিভার্সিটির ২০২৪ সালের গবেষণায়ও উঠে এসেছে, ফটো-এডিটিং অ্যাপ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সরাসরি নারীর কসমেটিক সার্জারির আগ্রহ বাড়াচ্ছে।
বয়স ও সৌন্দর্যের দৌড়
কৈশোর বা তারুণ্যের সৌন্দর্য ধরে রাখতে বয়সি নারীরা অনেক বেশি চাপ অনুভব করেন। সময়কে উল্টে দেওয়ার এই প্রচেষ্টা অনেক সময় অস্ত্রোপচার বা ইনজেকশনের দিকে ঠেলে দেয়। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট হলি শিফের মতে, নির্দিষ্ট সৌন্দর্যের আদর্শ মেনে চলার এই চাপ নারীর জীবনযাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে।
ঝুঁকি থেকে বাঁচার উপায়
কসমেটিক সার্জারি ও অন্যান্য মেডিকেশনের মাধ্যমে সৌন্দর্য বর্ধনের অনেক ঝুঁকি রয়েছে। চেহারা বিকৃত হওয়া থেকে শুরু করে মারাত্মক অসুস্থতা, এমনকি অকাল মৃত্যুও অস্বাভাবিক নয়। এই ঝুঁকির হাত থেকে বাঁচতে বিশেষজ্ঞদের কিছু পরামর্শ নিচে দেওয়া হলো :
► সমাজের সৌন্দর্যের আদর্শের সঙ্গে নিজেকে মেলানোর চাপ থেকে বিরত থাকুন। মনে রাখবেন, টেলিভিশন বা সোশ্যাল মিডিয়ায় যা দেখানো হয়, সেটাই একমাত্র সৌন্দর্য নয়।
► সোশ্যাল মিডিয়া থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকুন। ফেক, মডিফাইড ও ফিল্টার করা ছবি দেখা এড়িয়ে চলুন। নিজের ব্যক্তিত্ব এবং স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে ভালোবাসুন।
► আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের আসল চেহারাকে গ্রহণ করার চেষ্টা করুন। মনে মনে বারবার বলুন, ‘আমি যেমন, তেমনই সুন্দর।’ এই আত্মবিশ্বাস মানসিক শান্তি ফেরাবে।
লেখা : ফেরদৌস আরা