সার্বিকভাবে জুলাই জাতীয় সনদে ঐকমত্য হতে ও তা বাস্তবায়নের পথ খুঁজে বের করতে শেষবারের মতো চেষ্টার উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এরই অংশ হিসেবে আজ থেকে টানা তিন দিন দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করা হবে। তার আগে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করবে ঐকমত্য কমিশন। তাঁর বার্তা নিয়েই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসতে চায় কমিশন।
অন্যদিকে জুলাই সনদ নিয়ে বড় ধরনের বিভেদ কমাতে রাজনৈতিক দলগুলোর অনানুষ্ঠানিক বৈঠকের ফল শূন্য বলে জানিয়েছেন দলগুলোর কয়েকজন নেতা। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তাঁরা বলেন, সরকার ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অনুরোধে নিজেদের মধ্যে বেশ কয়েকবার অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করা হয়েছে। এসব বৈঠকের মূল বিষয়বস্তু ছিল রাষ্ট্র সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে একমত হওয়া ও সনদ বাস্তবায়নের পথ খুঁজে পাওয়া। শেষ পর্যন্ত কোনোটাতেই দলগুলো একমত হতে পারেনি। এখন তাঁরা চেয়ে আছেন কমিশন ও সরকারের ওপর।
কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শেষ পর্যন্ত দলগুলোকে ঐকমত্যের জায়গায় আনতে না পারলে বিশেষ করে সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে জটিলতা দেখা দিলে তা সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে।
দলগুলোর সঙ্গে চূড়ান্ত বৈঠক প্রসঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি প্রফেসর আলী রীয়াজ শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নে বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে একটি প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। সেটিই রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে উপস্থাপন করা হবে। এটি হবে কমিশনের সঙ্গে দলগুলোর চূড়ান্ত সংলাপ।’ সংশ্লিষ্টরা জানান, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে দুই ধরনের ‘প্যাকেজ প্রস্তাব’ রাখা হয়েছে। প্রথম প্যাকেজে থাকবে সংবিধান আদেশ জারি এবং সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের অভিমত গ্রহণ। এ প্রস্তাব অনুযায়ী, আদেশ জারির পর রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সের মাধ্যমে ১০৬ অনুচ্ছেদে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়া হবে। গণভোটের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ জারি করবে। দ্বিতীয় প্যাকেজে থাকবে সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে গণপরিষদ বা সংবিধান সংস্কার সভা গঠনের প্রস্তাব। নির্বাচনে জয়ী দল সরকার গঠন করবে। অন্তর্বর্তী সরকার সরে দাঁড়াবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেই সভাকে পাঁচ বছর মেয়াদি সংসদে রূপান্তর করা হবে এবং এ প্রস্তাবে এনসিপি, গণতন্ত্র মঞ্চ এবং কয়েকটি বাম দলের প্রস্তাবিত গণপরিষদের ধারণা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সরকার ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অনুরোধে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বেশ কয়েকটি অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বিশেষ করে বিএনপি, জামায়াত, এবি পার্টি, গণতন্ত্র মঞ্চ ও গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে এরই মধ্যে বৈঠক করেছে দলটি। কিন্তু ওইসব বৈঠকের ফল অনেকটা শূন্য বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র সংস্কারের মৌলিক ইস্যুসহ সনদ বাস্তবায়নে দলগুলোর সঙ্গে হওয়া অনানুষ্ঠানকি বৈঠকে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। গণভোট আর সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে আটকে গেছে সবাই।’ তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমাদের সঙ্গে আলাদাভাবে বিএনপি ও জামায়াতের বৈঠকে হয়েছে। সেখান থেকেও সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি।’
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে হতে যাওয়া জাতীয় সংসদ নির্বাচন উৎসবমুখর করতে জুলাই সনদ দ্রুত স্বাক্ষরের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। যদিও সনদের ৮৪টি বিষয়ের বেশির ভাগে রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে, তবু সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে এখনো মতানৈক্য রয়েছে। ১১ সেপ্টেম্বর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে দ্রুত সমঝোতায় পৌঁছানোর আহ্বান জানানো হয়। এর পর থেকে বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে কমিশন। এরই অংশ হিসেবে আজ থেকে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে শেষবারের মতো দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসছে কমিশন। এতে মৌলিক ইসুগুলো নিয়ে একমত না হতে পারা বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। আবার নির্বাচন সামনে রেখে সনদ কীভাবে বাস্তবায়ন করা যাবে তা নিয়েও বৈঠক হবে। কমিশনের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এটাই হচ্ছে আমাদের শেষ চেষ্টা। যদি বিষয়গুলো নিয়ে দলগুলো একমত হতে না পারে তাহলে সুপারিশ আকারে তা তুলে দেওয়া হবে সরকারের কাছে।’