আর মাত্র দুই মাস পর মাঠে গড়াবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের লড়াই। দীর্ঘ ১৭ বছর পর একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও উৎসবমুখর নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে মুখিয়ে আছে দেশের জনগণ। রাজনৈতিক দলগুলোও সর্বশক্তি দিয়ে সেরে নিতে শুরু করেছে ভোটের প্রস্তুতি। কিন্তু এই নির্বাচন নিয়ে জুলাই গণ অভ্যুত্থানের বিপ্লবীদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মধ্যে এখনো পর্যন্ত শুরু হয়নি কোনো প্রস্তুতি। ভোটের লড়াইয়ে অংশ নেওয়ার জন্য জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত কিংবা গণপরিষদ নির্বাচনের শর্ত জুড়ে দিয়েছে তারা। পাশাপাশি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রণয়নের শপথ নিয়ে গড়ে ওঠা সাত মাস বয়সি রাজনৈতিক দলটি এখন লড়াই করছে একের পর এক সংকটের সঙ্গে।
দলীয় সূত্র জানায়, জুলাই গণ অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী নেতাদের দল এনসিপির অনেক সম্ভাবনা এবং সুযোগ থাকলেও তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। তৃণমূলে গড়ে ওঠেনি শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামো। বিশেষ করে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালগুলোর ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে এনসিপি সমর্থিত ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ-বাগছাসের। দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সম্প্রতি দলের জাতীয় সমন্বয় সভায় এ নিয়ে বলেছেন, ‘সাংগঠনিকভাবে আমাদের যতটা শক্তিশালী হওয়ার কথা ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এবং সারা দেশে, এই এক বছরে সেই সাংগঠনিক শক্তি অর্জন করতে পারিনি।’
এদিকে এখন পর্যন্ত পুরো দলের জন্য একটা সুষম অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে এনসিপি। ফলে আর্থিক সংকটের মুখে ধীরগতিতে চলছে তৃণমূলের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম। কেন্দ্র থেকে প্রয়োজনীয় অনুদান না পাওয়ায় ব্যক্তি উদ্যোগে চলছে সাংগঠনিক কার্যক্রম। আসন্ন নির্বাচনে দলটির প্রার্থীরা কীভাবে নির্বাচনি ব্যয় সংকুলান করবেন তা নিয়েও নেই কোনো নির্দেশনা। এ নিয়ে হতাশায় ভুগছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।
তবে গত জুনে ক্রাউড ফান্ডিং নামক যে প্রকল্প এনসিপি শুরু করেছিল চার মাসে সেখান থেকে অনুদান এসেছে প্রায় ৬১ লাখ টাকা। এ নিয়ে জানতে চাইলে দলের যুগ্ম সদস্য সচিব (কোষাধ্যক্ষ) এস এম সাইফ মোস্তাফিজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অল্প সময়ে এনসিপি যে সাংগঠনিক কাঠামো পুরো দেশজুড়ে তৈরি করেছে এবং জনগণের কাছে আমাদের যে দায়বদ্ধতা তার ব্যয় নির্বাহের জন্য যে পরিমাণ আর্থিক প্রবাহ থাকা প্রয়োজন তা এখনো নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। আমরা চেষ্টা করছি আমাদের অর্থনৈতিক যে পলিসি সেটিকে আরও সমৃদ্ধ করার।
এ ছাড়া দলীয় প্রতীক ‘শাপলা’ নিয়ে নতুন সংকটের মুখে এনসিপি। বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীকের অংশ শাপলা ছাড়া নতুন ৫০টি প্রতীকের মধ্য থেকে যে কোনো একটি বেছে নিতে এনসিপিকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কিন্তু ইসির এই অবস্থানকে অযৌক্তিক ব্যাখ্যা দিয়ে শাপলাকেই দলীয় প্রতীক হিসেবে পাওয়ার জন্য অনড় অবস্থানে এনসিপির নেতারা। তারা ঘোষণা দিয়েছেন এই সংকট রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার। এনসিপি বলছে, শাপলা না দিলে তারা সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক উপায়ে সংগ্রাম চালিয়ে যাবে এবং কমিশনের সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। শান্তিপূর্ণ উপায়ে আলোচনার মাধ্যমে শাপলা না পেলে রাজপথের কর্মসূচির দিকে যাবে দলটি। দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রতীক হিসেবে শাপলা আদায়ে বুদ্ধিবৃত্তিক, কৌশলগত ও মাঠের কর্মসূচি সব মাধ্যমে আমাদের রাজনৈতিক লড়াই চলমান থাকবে।