চলতি সপ্তাহেই পাঁচটি সংকটাপন্ন ইসলামী ব্যাংকের জন্য প্রশাসক নিয়োগ দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব ব্যাংককে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একটি নতুন শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকে একীভূত করার অংশ হিসেবে এ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশের-২০২৫ আওতায় ব্যাংক খাত সংস্কারের অংশ হিসেবে এই একীভূতকরণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। গণ অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার এ অধ্যাদেশটি জারি করে ব্যাংক খাতে প্রয়োজনীয় একত্রীকরণ ও অধিগ্রহণের আইনি কাঠামো তৈরি করেছে।
প্রশাসক নিয়োগের পর সংশ্লিষ্ট পাঁচ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত হবে এবং তাদের একীভূত করার আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে রাজধানীর মতিঝিলের সেনাকল্যাণ ভবনের ১৭ তলায় ২ হাজার ৩৩৬ বর্গফুটের একটি অফিস বরাদ্দ দিয়েছে, যেখান থেকে নতুন রাষ্ট্রীয় ইসলামী ব্যাংক ‘ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক পিএলসি’ বা ‘ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক অব বাংলাদেশ পিএলসি’ গঠনের কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে পাঁচজন প্রশাসক বাছাই করেছি, এর মধ্যে দুজন নির্বাহী পরিচালক ও তিনজন পরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তা। চলতি সপ্তাহেই তারা দায়িত্ব নেবেন।’
তিনি আরও জানান, প্রশাসক নিয়োগের সঙ্গে সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হবে। এরপর ধাপে ধাপে একীভূতকরণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের নেতৃত্বে ব্যাংক একীভূতকরণের বিস্তারিত রোডম্যাপ তৈরি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা খুব শিগগিরই অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হবে। অনুমোদন মিললেই বাংলাদেশ ব্যাংক গেজেট প্রকাশ করে একীভূতকরণের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র জানায়, সরকার এরই মধ্যে এ বিষয়ে আট সদস্যের একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করেছে, যার আহ্বায়ক করা হয়েছে ডেপুটি গভর্নর ড. মো. কবির আহমদকে। কমিটি একীভূতকরণের আইনগত দিকগুলো তদারক করবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রস্তাবিত পরিকল্পনা অনুযায়ী, নতুন গঠিত ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দেবে ২০ হাজার কোটি টাকা, বাকি ১৫ হাজার কোটি টাকা আসবে ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স ট্রাস্ট ফান্ড ও প্রাতিষ্ঠানিক আমানত থেকে। একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংক হলো ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক এবং এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যাংক অব বাংলাদেশ (এক্সিম ব্যাংক)।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, পাঁচ ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা, যা তাদের মোট ঋণের ৭৭ শতাংশ। এর মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংকে খেলাপির হার সবচেয়ে বেশি ৯৮ শতাংশ; ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৯৬ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে ৯৫ শতাংশ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে ৬২ শতাংশ এবং এক্সিম ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪৮ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান মনে করেন, এই একীভূতকরণ দেশের ব্যাংক খাতকে স্থিতিশীল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কারণ গত কয়েক বছরে ইসলামী ব্যাংক খাতে অস্বচ্ছ ঋণনীতি ও অনিয়মের কারণে যে আর্থিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে এটি হবে একটি বড় সংস্কারমূলক পদক্ষেপ।