শরৎ মানেই নীল-সাদার মুগ্ধতা। আকাশের তুলতুলে নরম শিমুল তুলার মতো মেঘের ভেলা ভেসে বেড়ায়, আর নদীর তীর ছেয়ে যায় শুভ্র কাশফুলে। এই সময়টাতেই প্রকৃতি যেন শান্ত ও কোমল হয়ে ওঠে। ভোরে ঘাসের ডগায় জমে থাকা শিশির বিন্দু জানান দেয় যে বর্ষা শেষ, শুরু হয়েছে শরৎকাল। মৃদু লয়ে বাতাস বয়ে চলা আর শিউলি ফুলের মিষ্টি গন্ধে ভরে ওঠা চারপাশ- শরতের সৌন্দর্য মনকে আরাম দেয়, চোখকে মুগ্ধ করে।
তবে বর্তমান আবহাওয়ার দিকে তাকালে দেখা যায় এক অদ্ভুত খেলা। এই রোদ ঝলমল করছে, আবার হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকে অঝোরে বৃষ্টিও পড়ছে। এই রোদ-বৃষ্টির লুকোচুরি নিয়েই শরৎকাল বহমান। সময় ও নিয়ম অনুযায়ী এখন শুভময় শরৎকাল চললেও, প্রকৃতির হঠাৎ পরিবর্তন আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে ঋতুচক্র কখনো কখনো তার স্বাভাবিক ধারা থেকে বিচ্যুত হয়।
শরতের সাজ-পোশাক
শরতের সাজ-পোশাকে দীর্ঘকাল ধরেই নীল ও সাদা রংকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। এই দুটি রং প্রকৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত- কাশফুলের সাদা শুভ্রতা আর আকাশের নীল স্নিগ্ধতা মানুষের মনকে ভরিয়ে তোলে। এই সময়টায় মানুষ সাধারণত একটু আরামদায়ক এবং সাধারণ পোশাকে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করে, কারণ গরমের একটি তীব্রতা থাকলেও তার পাশাপাশি মৃদু হাওয়াও বয়ে চলে।
শুভ্রতার সঙ্গে স্নিগ্ধতা
শরতের পোশাকের রং নির্বাচনের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যেন তা খুব রং চটা বা খুব গাঢ় না হয়। পোশাকে এমন রঙের ব্যবহার করা উচিত যাতে বহমান ঋতুর স্নিগ্ধ আবির্ভাব ফুটে ওঠে। নীল, সাদা, আকাশি এই রংগুলোর পাশাপাশি এবার আপনি বেছে নিতে পারেন : হালকা কমলা, গোলাপি, হালকা সবুজ, হালকা সবুজে নীল রং। এই হালকা এবং উজ্জ্বল রংগুলো আপনার শরতের সাজকে শুভ্র এবং আরামদায়ক রূপ দেবে।
পোশাকের নকশা ও উপকরণ
শরতের পোশাকআশাক হিসেবে ঘুরতে যাওয়ার জন্য প্রথম প্রাধান্য শাড়ি হতে পারে, কারণ শাড়িতেই বাঙালি নারীর সৌন্দর্য সবচেয়ে বেশি ফুটে ওঠে। তবে আরামের বাইরে গিয়ে শাড়ি পরার কোনো প্রয়োজন নেই। পোশাকের নকশার ক্ষেত্রে প্রকৃতির উপাদানগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত, যা এই ঋতুর সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত : যেমন- মেঘ, ফুল (শিউলি, বেলি), লতাপাতা, সমুদ্র, মাছ, প্রজাপতি ইত্যাদি। এই ধরনের নকশাগুলোই বলে দেবে প্রকৃতিতে এখন কী বিরাজ করছে। নকশার ক্ষেত্রে বাটিক, ব্লক ও স্ক্রিন প্রিন্টের মতো ঐতিহ্যবাহী কাজগুলোও দারুণ মানানসই। ভারী কাজের বদলে হালকা কাজ এবং নরম কাপড়ের পোশাক স্বাচ্ছন্দ্য এনে দেবে।
যদি শাড়ি পরতে চান, তবে একরঙা সাদা বা অফ-হোয়াইট শাড়ি বেছে নিতে পারেন। শাড়ির সৌন্দর্য অনেকাংশে ব্লাউজের ওপর নির্ভর করে। স্লিভলেস বা ভারী কাজের একটি ব্লাউজ শাড়ির গর্জিয়াস ভাব ফুটিয়ে তুলতে পারে। আবার শাড়িটি জমকালো হলে সিম্পল ব্লাউজই বেশি ভালো লাগবে।
শরতের সাজসজ্জা
ঋতুভেদে সাজগোজের পরিবর্তন হয়, আর শরৎকালে আমাদের সাজে থাকতে হবে শুভ্রতা ও স্নিগ্ধতার ছাপ।
মেকআপের কৌশল
♦ মেকআপ যেন খুবই মিনিমাল হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ভারী মেকআপ এড়িয়ে চলুন।
♦ দিনের বেলায় মেকআপে ব্লাশন এড়িয়ে যাওয়া ভালো।
♦ ডার্ক ব্রাউন আইব্রো শ্যাডো দিয়ে আইব্রো শেপ করে নিন।
♦ চোখে কাজল পরতে ভুলবেন না।
♦ ঠোঁটের জন্য গোলাপি রঙের লিপস্টিকের প্রাধান্য দিতে পারেন। স্কিন কালার লিপলাইনার ব্যবহার করে সামান্য সিমারি গোল্ডেন লিপগ্লস লাগালে সাজটা আরও স্নিগ্ধ হবে।
♦ পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে কপালে টিপ দিতে পারেন।
♦ যারা একটু বেশি রঙিনভাবে সাজতে চান, তারা পোশাকের রঙের বিপরীত রংও চোখের কাজল, শ্যাডো বা লিপস্টিকের ক্ষেত্রে বেছে নিতে পারেন।
চুল ও অনুষঙ্গ
শরৎ মানেই চারদিকে বেলি ফুলের মিষ্টি গন্ধ। তাই নিজের সাজকে আরও স্নিগ্ধ ও শুভময় করে তোলার জন্য চুলে বেলি ফুল লাগাতে ভুলবেন না। এ ছাড়াও চুল হালকা পাফ করে একপাশে সিঁথি করে পেছনের চুলগুলো চিকন বেণী করে খোঁপা করতে পারেন।
♦ সাজ যেহেতু স্নিগ্ধ, তাই জমকালো গয়না না পরাই ভালো। কানে হালকা দুল (সাদা বা সিলভার রঙের) এবং হাতে ভারী ব্রেসলেট ভালো লাগবে।
♦ শাড়ির সঙ্গে হাইহিল বা সেমি হাইহিল দেখতে ভালো লাগবে।
♦ ব্যাগ হিসেবে ক্লচ ব্যাগ বেছে নিন।
♦ সবশেষে, অবশ্যই মিষ্টি ঘ্রাণের সুগন্ধি ব্যবহার করুন।
শরৎকাল হলো প্রকৃতির এক অপূর্ব উপহার। এই সুন্দর ঋতুকে স্মৃতিময় করে তুলতে এবং এর শুভ্রতা নিজের মধ্যে ফুটিয়ে তুলতে সাজসজ্জার দিকে বিশেষ নজর দিন। প্রিয়জনের সাথে ঘুরে বেড়ান, কাশফুলের শুভ্রতার মাঝে আনন্দ উপভোগ করুন।
লেখা : সাদিয়া সারা