শারদীয় উৎসব মানে সীমাহীন আনন্দ। ঢাকের তালে, প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘুরে প্রতিমা দর্শন, অষ্টমীর অঞ্জলি, আর নবমীর রাতে বন্ধুদের সঙ্গে জমজমাট আড্ডা- সব মিলিয়ে পূজার এই দিনগুলো যেন এক স্বপ্নের মতো কেটে যায়। কিন্তু এই রাতভর উৎসবের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও থাকে। পরদিন সকালে আয়নার সামনে দাঁড়ালেই চোখে পড়ে ক্লান্ত, অবসন্ন চেহারা। চোখের নিচে কালি আর ফোলা ভাব যেন উৎসবের সব আনন্দ কেড়ে নেয়, আর ত্বকের উজ্জ্বলতা এক রাতেই হারিয়ে যায়।
পূজার রাতের পরদিন সকালে সতেজতা ফিরে পাওয়ার জন্য কিছু ধাপ অনুসরণ করা যেতে পারে। রাতে বাড়ি ফিরে যতই ক্লান্ত লাগুক, মেকআপ না তুলে ঘুমানো ত্বকের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। প্রথমে একটি অয়েল-বেসড ক্লিনজার বা মাইসেলার ওয়াটার দিয়ে মেকআপ ভালোভাবে তুলে নিন। এরপর ত্বকের ধরন অনুযায়ী একটি হালকা ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। এটি ত্বককে গভীর থেকে পরিষ্কার করবে। ত্বকের ওপর জমে থাকা মৃত কোষ সরাতে সপ্তাহে দু-তিন দিন হালকা স্ক্রাব ব্যবহার করা যেতে পারে। কফি বা চালের গুঁড়ার সঙ্গে মধু বা টক দই মিশিয়ে প্রাকৃতিক স্ক্রাব তৈরি করা যায়। এটি ত্বকের রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনবে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর মুখের ফোলা ভাব কমানোর জন্য বরফ একটি চমৎকার উপায়। নরম কাপড়ে কয়েক টুকরা বরফ নিয়ে মুখে আলতো করে বুলিয়ে নিতে পারেন। এটি শুধু ফোলা ভাবই কমাবে না, বরং লোমকূপ সংকুচিত করে ত্বককে টান টান করবে।
সারা রাত না ঘুমানোর সবচেয়ে স্পষ্ট ছাপ পড়ে চোখের চারপাশে। চোখের নিচের কালি আর ফোলা ভাব মুখের সতেজতা নষ্ট করে দেয়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ব্যবহৃত ঠান্ডা টি-ব্যাগ, শসার টুকরা বা আলুর রস চোখের ওপর ১০-১৫ মিনিট রেখে দিলে দারুণ উপকার পাওয়া যায়। আলুতে থাকা এনজাইম ফোলা ভাব ও কালো দাগ কমাতে সাহায্য করে। ক্লান্ত মুখে ভারী মেকআপ করলে চেহারাকে আরও বেশি অবসন্ন দেখাতে পারে। তাই পূজার পরদিন সকালে সাজসজ্জা হওয়া উচিত খুব হালকা ও স্বাভাবিক। ভারী ফাউন্ডেশনের বদলে বিবি ক্রিম বা টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা যায়। এটি ত্বককে মসৃণ ও স্বাভাবিক লুক দেবে। চোখের নিচের কালো দাগ ঢাকতে অল্প পরিমাণে কনসিলার ব্যবহার করা যেতে পারে। গালের উঁচু অংশে হালকা গোলাপি বা পিচ রঙের ব্লাশ চেহারায় সতেজতা আনবে। চোখে সাদা বা ন্যুড কাজল আর এক বা দুই কোট মাসকারা ব্যবহার করলে চোখ দুটি উজ্জ্বল দেখাবে। ঠোঁটে হালকা রঙের লিপস্টিক বা লিপবামই যথেষ্ট।
শুধু বাইরের পরিচর্যাই যথেষ্ট নয়, ভিতর থেকে সতেজ অনুভব করাও জরুরি। পর্যাপ্ত পানি পান করা এর মধ্যে অন্যতম। রাত জাগার ফলে শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে পড়ে। তাই সকালে কুসুম গরম পানির সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন। সারা দিন পর্যাপ্ত পানি পান করলে শরীর থেকে টক্সিন বের হয়ে যাবে। ক্লান্তি দূর করতে সঠিক নাশতাও খুব জরুরি। তৈলাক্ত বা মিষ্টি খাবার এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলো শরীরকে আরও ক্লান্ত করতে পারে। ওটস, দই, বাদাম এবং তাজা ফল এ ক্ষেত্রে ভালো।
লেখা : উম্মে হানি