যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা উপকূলের কাছাকাছি ১৭১৫ সালের একটি স্প্যানিশ ডুবে যাওয়া জাহাজের ধ্বংসাবশেষ থেকে এক হাজারেরও বেশি রৌপ্যমুদ্রা এবং পাঁচটি স্বর্ণমুদ্রা পাওয়া গেছে। এসব ধনসম্পদের মূল্য প্রায় ১০ লাখ ডলার (প্রায় ৮.৮৭ কোটি টাকা)।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি তাদের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জাহাজ উদ্ধারকারী প্রতিষ্ঠান ‘১৭১৫ ফ্লিট-কুইনস জুয়েলস এলএলসি’ ৩০ সেপ্টেম্বর এই ঐতিহাসিক আবিষ্কারের ঘোষণা দেয়। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ‘রিয়ালেস (reales)’ নামে পরিচিত রুপার মুদ্রাগুলো উদ্ধার করেন ক্যাপ্টেন লেভিন শেভার্স এবং তার দল, যারা মোটরযান “জাস্ট রাইট”-এ করে অভিযানে ছিলেন। পৃথক একটি অনুসন্ধানে ‘এস্কুডোস (escudos)’ নামে পরিচিত পাঁচটি স্বর্ণমুদ্রাও উদ্ধার করা হয়।
প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, এই ধনসম্পদ আসলে একটি বিশাল সম্পদের অংশ, যা ১৭১৫ সালের ৩১ জুলাই এক ভয়াবহ হারিকেনে স্পেনগামী ধনভর্তি নৌবহর ডুবে যাওয়ার সময় হারিয়ে যায়। ইতিহাসবিদদের ধারণা, সেই দুর্ঘটনায় প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলারের স্বর্ণ, রৌপ্য ও রত্ন সমুদ্রে ডুবে গিয়েছিল।
প্রতিষ্ঠানটির অপারেশন ডিরেক্টর স্যাল গুটুসো বলেন, “এই আবিষ্কার কেবল ধনসম্পদ নয়, বরং এর পেছনের গল্পগুলোরও প্রতিফলন।”
তিনি বলেন, “প্রতিটি মুদ্রাই ইতিহাসের এক টুকরো সাক্ষ্য — যারা সেই সময়ে বাস করত, কাজ করত এবং সমুদ্রপথে যাত্রা করত তাদের সঙ্গে এক জীবন্ত যোগসূত্র। একসঙ্গে ১,০০০ মুদ্রা পাওয়া অত্যন্ত বিরল ও অসাধারণ একটি ঘটনা।”
‘পিসেস অব এইট’ নামে পরিচিত এই মুদ্রাগুলো স্পেনের উপনিবেশ মেক্সিকো, পেরু এবং বলিভিয়ায় তৈরি হয়েছিল। অনেক মুদ্রায় এখনো সাল ও টাঁকশালের চিহ্ন স্পষ্টভাবে দেখা যায়, যা ইতিহাসবিদ ও সংগ্রাহকদের কাছে বিশেষ মূল্যবান। মুদ্রাগুলোর অবস্থান দেখে ধারণা করা হচ্ছে, এগুলো একটি একক সিন্দুক বা চালানের অংশ ছিল, যা হারিকেনের সময় জাহাজ ভেঙে যাওয়ার পর সমুদ্রে ছড়িয়ে পড়ে।
উদ্ধারস্থলটি ফ্লোরিডার বিখ্যাত “ট্রেজার কোস্ট” নামের এলাকায় অবস্থিত, যেখানে এখনো কড়া সরকারি তত্ত্বাবধানে এবং প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দেশনা মেনে আধুনিক উদ্ধার অভিযান পরিচালিত হয়।
“প্রতিটি আবিষ্কার আমাদেরকে ১৭১৫ সালের সেই নৌবহরের মানবিক ইতিহাস আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করে,” যোগ করেন গুটুসো। “আমরা এই নিদর্শনগুলো সংরক্ষণ ও অধ্যয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মও তাদের ঐতিহাসিক গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারে।”
উদ্ধার হওয়া মুদ্রাগুলো এখন সংরক্ষণের জন্য বিশেষ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাবে। এরপর এগুলোর কিছু অংশ স্থানীয় জাদুঘরে প্রদর্শনের পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে ফ্লোরিডার বাসিন্দা ও দর্শনার্থীরা সরাসরি দেখতে পারবেন রাজকীয় স্প্যানিশ যুগের সেই সমুদ্রগাঁথা ধনসম্পদের সাক্ষ্য।
সূত্র: এনডিটিভি
বিডি প্রতিদিন/নাজিম