একসময় পরিচ্ছন্নতা ও সবুজায়নের জন্য ‘মডেল সিটি’ খ্যাত রাজশাহী মহানগরী এখন নানা সংকটে জর্জরিত। ধুলার নগরীতে পরিণত হয়েছে পুরো রাজশাহী। বায়ুমান সূচকেও দিন দিন বাড়ছে নেতিবাচক ধারা। বাতাসে ধুলা, রাস্তায় ধূলিঝড়। আর এতেই বাড়ছে শ্বাসকষ্ট।
শহরের আমচত্বর, লক্ষ্মীপুর, সাহেববাজার, রাণীবাজারসহ অধিকাংশ এলাকায় দেখা গেছে ধুলায় ঢেকে থাকা রাস্তা ও ফুটপাত। আমচত্বর এলাকার ব্যবসায়ী হাসিবুল ইসলাম বলেন, ‘দোকান খুললেই ধুলার ঝড় লাগে। প্রতিদিন দোকানের জিনিসপত্র কয়েকবার পরিষ্কার করতে হয়। সিটি করপোরেশনের পানি ছিটানোর গাড়ি এখন আর দেখা যায় না।’
পরিবেশ অধিদপ্তর এবং আন্তর্জাতিক বায়ু পর্যবেক্ষকদের সংগৃহীত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, রাজশাহী শহরের বায়ুর মান নিয়মিতভাবে ২০০-এর সীমা অতিক্রম করছে। এমনকি কোনো কোনো সময় বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে তা ৪০০ ছাড়িয়ে গেছে। পর্যালোচনা অনুযায়ী, সর্বশেষ ২০২৪ সালে রাজশাহী নগরীর একিউআই-এর মান ৩০০-এর সীমা ছাড়িয়েছিল তিন দিন। তখন সর্বোচ্চ একিউআই-এর মান রেকর্ড করা হয়েছিল ৩১৭ এবং ২০০-এর ওপর ছিল ৪৮ দিন। তবে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেই নগরীর একিউআই-এর মান ৩০০-এর সীমা ছাড়িয়েছে সাত দিন। গবেষকদের মতে, বায়ুদূষণের বেশ কয়েকটি নিয়ামকের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিকর হচ্ছে ফাইন পার্টিকুলার ম্যাটার বা সংক্ষেপে পিএম ২.৫। পিএম ২.৫ হচ্ছে বাতাসে মিশে থাকা অতি সূক্ষ্ম কণা যার ব্যাস মানুষের মাথার চুলের ব্যাসের প্রায় ৩০ ভাগের এক ভাগ। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে রাজশাহীর বাতাসে পিএম ২.৫-এর পরিমাণ প্রতি ঘনমিটারে সর্বোচ্চ ৪৪৮.৫ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছিল; যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকার চেয়ে প্রায় ৩০ গুণ বেশি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান সম্প্রতি রাজশাহী শহরের বায়ুর মান নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি শহরের বায়ুর মানের অবনতির জন্য অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণ কার্যক্রম, নিয়ন্ত্রণহীন যানবাহন ও শিল্পকারখানার বর্জ্য নির্গমন এবং সবুজ স্থান ও জলাশয় কমে যাওয়াকে দায়ী করেছেন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের রাজশাহী কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. কবির হোসেন বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় নির্মাণ কার্যক্রম এবং সবুজায়ন কমে যাওয়ায় রাজশাহী শহরে বাতাসের মান খারাপ হচ্ছে। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন বলেন, বেশ কিছু উন্নয়নকাজ চলমান। ফলে ঠিকমতো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালানো যাচ্ছে না। যার প্রভাব পড়ছে বায়ুতে। নির্মাণকাজগুলো শেষ হলে আবারও রাজশাহী আগের অবস্থায় ফিরে আসবে।