ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জমে উঠেছে হবিগঞ্জের নির্বাচনি ময়দান। এ ডামাডোলে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে পিছিয়ে নেই অন্য দলগুলোও। তারাও তাদের মতো করে চালিয়ে যাচ্ছে প্রচার-প্রচারণা।
এরই মধ্যে হবিগঞ্জের চারটি আসনের মধ্যে তিনটিতে নিজেদের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে বিএনপি। একটি আসনে এখন পর্যন্ত প্রার্থিতা ঘোষণা করা হয়নি। জামায়াত চারটি আসনেই প্রার্থী ঘোষণা করেছে। অন্য দলগুলোও তাদের প্রার্থী দিয়েছে।
যদিও এনসিপি এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি। মাঠের খবর অনুযায়ী, বড় দুই দল বিএনপি এবং জামায়াতের প্রার্থীরা তাদের দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তাদের প্রচার-প্রচারণায় হাটবাজার, মাঠঘাট সরগরম। ভোট প্রার্থনা করে প্রার্থীরা দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।
হবিগঞ্জ-১ (বাহুবল-নবীগঞ্জ) আসন : এ আসনে এখন পর্যন্ত বিএনপি কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। এরই মধ্যে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। ফলে প্রার্থিতা নিয়ে আসনটির সমীকরণ পাল্টে গেছে। এমতাবস্থায় নবীগঞ্জ-বাহুবলের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছে কে পাচ্ছেন ধানের শীষের প্রতীক। ড. রেজা কিবরিয়া ছাড়াও আসনটিতে কয়েকজন সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেন- যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সুজাত মিয়া, নবীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ছাবির আহমদ চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিএনপির সভাপতি মোজাম্মেল হক নান্টু ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মুুখলিছুর রহমান। ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘আমি দলে যোগদান করেছি ঠিক। কিন্তু দল এ আসনে প্রার্থী ঘোষণার বিষয়ে সময় নিচ্ছে।’ এ অবস্থায় ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন জামায়াতের প্রার্থী সিলেট মহানগর জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও সেক্রেটারি মো. শাহজাহান আলী।
হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ) : আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। এখন ঘাঁটিটি দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিএনপি ও জামায়াত। এ আসনে এবার বিএনপির প্রার্থী হয়েছেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন। আর জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন ঢাকা মহানগরের উত্তরের শুরা সদস্য ও হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রশিবিবের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট শেখ জিল্লুর রহমান আজমী। খেলাফত মজলিসের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন দলটির আমির মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের প্রার্থী মুফতি এখলাছুর রহমান রিয়াদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রার্থী মাওলানা হাদিছুর রহমান।
হবিগঞ্জ-৩ : হবিগঞ্জ সদর, লাখাই ও শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার সমন্বয়ে গঠিত হবিগঞ্জ-৩ আসন। হবিগঞ্জের চারটি আসনের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু এ আসন। আসনটি থেকে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক পদত্যাগকারী মেয়র আলহাজ জি কে গউছ। আর জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনি মাঠে রয়েছেন হবিগঞ্জ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ কাজী মহসিন আহমদ। বিএনপি-জামায়াত ছাড়াও গণঅধিকার পরিষদ থেকেও আসনটিতে লড়তে যাচ্ছেন এক প্রার্থী। তিনি হলেন গণঅধিকার পরিষদ হবিগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট চৌধুরী আশরাফুল বারী নোমান। আসনটিতে অন্য প্রার্থীরা হলেন- খেলাফত মজলিসের প্রার্থী জেলা সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট ছরওয়ার রহমান চৌধুরী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী দলটির জেলা শাখার সভাপতি মহিব উদ্দীন আহমদ সোহেল ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের প্রার্থী মাওলানা মাহবুবুর রহমান চৌধুরী হেলাল।
হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) : চা বাগান অধ্যুষিত চুনারুঘাট ও মাধবপুর উপজেলার ভোট বরাবরই নৌকার পক্ষে যায়। এবার মাঠে আওয়ামী লীগ না থাকলেও বিএনপির সঙ্গে লড়ছেন জামায়াতে ইসলামীসহ অন্য দলের প্রার্থীরা। বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন সায়হাম গ্রুপের চেয়ারম্যান হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়সল।
জামায়াতে ইসলামী থেকে লড়ছেন হবিগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমির কাজী মাওলানা মুখলিছুর রহমান। এ ছাড়া নির্বাচনি মাঠে রয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক আহমদ আবদুুল কাদের ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী দলটির চুনারুঘাট উপজেলা কমিটির সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমদ।