জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট আয়োজনের দাবিতে নিজেদের অনড় অবস্থানের কথা জানিয়েছে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনসহ সমমনা ৮ দল। দলগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিসহ অন্যান্য দাবিতে যৌথ উদ্যোগে তারা আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা বাদে অন্য বিভাগীয় শহরগুলোতে সমাবেশ আয়োজন করবে।
বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর পল্টনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ৮ দলের লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে আট দলের পক্ষ থেকে সমাবেশ আয়োজনের এ ঘোষণা দেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েব আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ। ঘোষিত কর্মসূচি অনুসারে—৩০ নভেম্বরের সমাবেশ হবে রংপুরে। ১ ডিসেম্বরের সমাবেশ হবে রাজশাহীতে। এই ধারাবাহিকতায় ২ ডিসেম্বর খুলনায়, ৩ ডিসেম্বর বরিশালে, ৪ ডিসেম্বর ময়মনসিংহে, ৫ ডিসেম্বর সিলেটে ও ৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে অন্য সমাবেশগুলো অনুষ্ঠিত হবে। এসব সমাবেশে ৮ দলের শীর্ষ নেতারা বক্তব্য দেবেন।
ব্রিফিংয়ে মাওলানা ইউসুফ আশরাফ বলেন, ‘আমরা এখনো গণভোট আলাদা দিনে আয়োজনের দাবি জানিয়ে যাচ্ছি।’ সেই সঙ্গে গণভোটে ‘হ্যাঁ’-এর পক্ষে মত দিতে তাদের পক্ষ থেকে পক্ষ থেকে জনমত গঠন করা এবং প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দেন তিনি।
মাওলানা ইউসুফ আশরাফ বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় ও জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশে তাদের দাবির আংশিক পূরণ হয়েছে। কিন্তু জুলাই হত্যাকাণ্ডে অন্য অপরাধীদের বিচার এবং স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে জাতীয় পার্টিসহ অন্য দলগুলোকে নিষিদ্ধ করা কিংবা নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির দাবিগুলো এখনো পূরণ হয়নি।
ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য ও জামায়াতে ইসলামী সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ।
নির্বাচনী আয়োজনের ভেতর আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ব্যাখ্যায় আযাদ বলেন, আমাদের দাবি থেকে আমরা সরিনি। আমরা সরকারকে (নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের) বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য বলেছি। বলেছি বিকল্প পথ বের করেন; আলোচনার দরজা বন্ধ করবেন না।
একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের ব্যবস্থাপনা কিভাবে হবে, সে ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি বলেও মন্তব্য করেন এই জামায়াত নেতা।
তিনি বলেন, আজকে আমরা ইলেকশন কমিশনে গিয়েছিলাম। কোনো সদুত্তর পাইনি। …তার মানে সরকারও এখনো সুস্পষ্টভাবে একই দিনে কিভাবে (দুটি) ভোট নেবে সেই পরিকল্পনা ঠিকভাবে স্থির করতে পারেনি।
এ ছাড়া আন্দোলনে থাকা আট দল সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচনে যাবে বলেও মন্তব্য করে আযাদ বলেন, ‘আমরা সমঝোতার ভিত্তিতে ইলেকশনে যাব—এ রকম একটা আলোচনা হয়েছে। চূড়ান্ত ফয়সালাটা শীর্ষ বৈঠকের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে আসবে। ৮ দলের বাইরে আরো দল আসবে কি না সেই আলোচনা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। ফ্যাসিবাদবিরোধী ইসলামী, গণতান্ত্রিক, দেশপ্রেমিক—যত শক্তি আছে সবাইকে নিয়ে আমরা ইলেকশনে পার্টিসিপেট করতে চাই। এই দরজা আমাদের উন্মুক্ত আছে।’
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দিন আহমাদের পরিচালনায় প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, নায়েবে আমির মাওলানা সাখাওয়াত হুসাইন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ফজলে বারী মাসউদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা শরাফত হুসাইন, জাগপার সিনিয়র সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, নেজামে ইসলাম পার্টির সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুল মাজেদ আতহারী, মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইজহার, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব ইউসুফ সাদেক হক্কানী, প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা তাওহিদুজ্জামান, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির দপ্তর সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শহিদুল আলম, অর্থ সম্পাদক রিয়াজ হোসেন প্রমুখ।
বিডি-প্রতিদিন/শআ