চট্টগ্রাম নগরের চৌমুহনি-বেপারিপাড়া সংযোগ সড়কের নালায় ২১ জুলাই রাত ১১টায় পড়ে যান এক নারী। ওই সময় মোটরসাইকেলে করে ওই পথ দিয়ে যাওয়া মাহমুদুর রহমান নামে এক ব্যক্তি তা দেখে গাড়ি থামিয়ে দেখেন, স্ল্যাববিহীন নালায় পড়ে গেছেন পঞ্চাশোর্ধ এক নারী। তিনি আশপাশের আরও কয়েকজনকে ডেকে এনে ওই নারীকে তুলে আনেন।
মাহমুদুর রহমান বলেন, আমি বাসায় যাওয়ার পথে আলো-আঁধারির মধ্যে হঠাৎ খেয়াল করি, নালার নিচ থেকে কেউ হাত নাড়াচ্ছেন। গাড়ি থেকে নেমে কাছে গিয়ে দেখি, একজন নারী স্ল্যাববিহীন নালায় পড়ে গেছেন। তখন আমরা কয়েকজন মিলে তাকে তুলে বাসায় পাঠিয়ে দিই। তিনি পাশর্^বর্তী একটি গার্মেন্টে চাকরি করেন।
এভাবে নগরের বিভিন্ন এলাকার উন্মুক্ত স্ল্যাবহীন নালায় পড়ে মানুষ আহত হচ্ছেন। কিন্তু এসবের কোনোটিই প্রকাশ পায় না। কেবল নালায় পড়ে মারা গেলেই তা প্রকাশ হয়। টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। গত আট বছরে নগরের নালা-খালে পড়ে অন্তত ১৬ নিহত ও নিখোঁজ হন। প্রতিটি ঘটনার পর আলোচনা হয়। এরপর সবকিছুই যথারীতি স্বাভাবিক হয়ে যায়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নগরের নালা-নর্দমাগুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার করে।
চসিকের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, বিল্ডিং কোড না মেনে নালা দখল করে ভবন ও স্থাপনা করা হয়েছে। এগুলো ভাঙতে সিডিএকে অনুরোধ করব। ভেঙে ময়লা পরিষ্কার করার ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ প্রাথমিক ব্যবস্থাপনায় নালাগুলো আমাদের পরিষ্কার রাখতে হবে। নগরের নালা নিয়ে আমরা পরিপূর্ণ একটা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। চসিক সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ এপ্রিল রাতে নগরের চকবাজার কাপাসগোলার হিজড়া খালে পড়ে মৃত্যু হয় ছয় মাসের শিশু সেহরিশের। এর পর চসিক নগরের ঝুঁকিপূর্ণ স্ল্যাবহীন নালা এবং উন্মুক্ত খাল-নালা ও ড্রেনের স্থান চিহ্নিতের উদ্যোগ নেয়। তালিকা অনুযায়ী ৪১টি ওয়ার্ডে মোট ৫৬৩টি জায়গাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তালিকা মতে, দুর্ঘটনা এড়াতে বিভিন্ন স্থানে ৮৬৩টি স্ল্যাব বসানো ও বেষ্টনী না থাকা ১৫৬টি জায়গায় নিরাপত্তাবেষ্টনী দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এর আগে, চসিক ২০২১ সালের অক্টোবরে নগরের ঝুঁকিপূর্ণ খাল, নালা-নর্দমার একটি তালিকা প্রস্তুত করেছিল। ওই তালিকায় নগরের ৪১টি ওয়ার্ডে ১ হাজার ১৩৭ মিটার খাল, নালা-নর্দমা আছে। এর মধ্যে নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়া খালের পাড় আছে ১৯ হাজার ২৩৪ মিটার, উন্মুক্ত নালা আছে পাঁচ হাজার ৫২৭টি স্থানে। এগুলোকে তখনই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। কিন্তু চসিক যথাযথভাবে নিরাপত্তা বেষ্টনী না দেওয়ায় বার বার দুর্ঘটনা ঘটছে। তাছাড়া গত ১৮ এপ্রিল খালে পড়ে শিশু মৃত্যুর ঘটনার পর বাঁশ দিয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী দিলেও তা টেকসই না হওয়ায় মাস পার হতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।