জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সফররত বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সফরসঙ্গীরা হেনস্তার শিকার হয়েছেন। সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় বিকাল তিনটার দিকে নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি (জেএফকে) বিমানবন্দরের বাইরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কিছু প্রবাসী তাদের হেনস্তা এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেনকে লক্ষ্য করে ডিম নিক্ষেপ করে লাঞ্ছিত করে। অন্যদিকে, ডিম নিক্ষেপ ও হেনস্তার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে ঘটনার ছয় ঘণ্টা পর জ্যাকসনহাইটস এলাকা থেকে নিউইয়র্ক পুলিশ যুবলীগ নেতা মিজানুর রহমান চৌধুরীকে আটক করে। পরে তাকে মুচলেকায় মুক্তি দেওয়া হয়। জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস তাঁর পাঁচজন সফরসঙ্গী নিয়ে এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় সোমবার বিকাল ৩টা ১১ মিনিটে জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। প্রধান উপদেষ্টা সরকারি প্রটোকল নিয়ে বের হয়ে যান। তাঁর চলে যাওয়ার প্রায় ১ ঘণ্টা পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন এবং এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা কোনো প্রটোকল ছাড়াই বিমানবন্দর থেকে বের হন। বিমানবন্দরের ৮ নম্বর টার্মিনাল দিয়ে বের হওয়ার সময় কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কিছু নেতা-কর্মী বিএনপি মহাসচিব, এনসিপির নেতাদের অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করেন। এনসিপি সদস্য সচিব আখতার হোসেনের গায়ে ডিম ছুড়ে মারেন। তাদের অশ্রাব্য গালাগাল থেকে বাদ যাননি ডা. তাসনিম জারাও।
সরেজমিনে দেখা যায়, টার্মিনাল দিয়ে বের হওয়ার সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং হুমায়ুন কবির পাশাপাশি অবস্থানে হেঁটে পার্কিং স্পটের দিকে যাওয়ার সময় তাদেরকে ‘বাংলাদেশের দুশমন’ বলে স্লোগান দেওয়া হয়। এ দুজনকে অনুসরণ করছিলেন এনসিপির আখতার হোসেন ও ডা. তাসনিম জারা। ‘রাজাকার’, ‘কিলার’ বলে গালাগাল করে তাদের ক্ষণে ক্ষণে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এর মধ্যেই আখতার হোসেনের ওপর দুটি ডিম ছুড়ে মারে বিক্ষোভকারীরা। এ সময় আখতার ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ বলে জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেন।
এদিকে মির্জা ফখরুল ও আখতার হোসেন গাড়িতে ওঠার পরও রাস্তায় শুয়ে তাদের গাড়ি আটকে দেওয়ার চেষ্টা করেন কয়েকজন বিক্ষোভকারী।
হেনস্তার প্রতিক্রিয়ায় যা বলেছেন আখতার হোসেন ও তাসনিম জারা : জেএফকের ঘটনায় এনসিপির আখতার হোসেন বলেন, ‘হাসিনার গুলির সামনে দাঁড়িয়ে ভয় পাইনি, ভাঙা ডিমে কিছু যায় আসে না।’ পরিকল্পিতভাবে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য এ হামলা চালানো হয়েছে বলে তাঁর অভিযোগ। আর ডা. তাসনিম জারা বলেন, ‘এই হামলা দেখিয়ে দিল পরাজিত শক্তির ভয়-হতাশা কতটা গভীর।’
প্রেস সচিবের প্রতিক্রিয়া : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল ইসলাম হেনস্তার ঘটনাকে অনাকাঙ্ক্ষিত আখ্যায়িত করে বলেন, ‘এটি একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। বিষয়টি কনস্যুলেট ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেখবে। সরকার এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করছে।’
বিএনপি মহাসচিবের প্রতিক্রিয়া : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে লিখেছেন, ‘নিউইয়র্ক বিমানবন্দরে যা ঘটেছে, তা আবারও প্রমাণ করল, আওয়ামী লীগ তাদের অন্যায়ের জন্য বিন্দুমাত্র অনুশোচনা করে না। আওয়ামী লীগ আজ পর্যন্ত যা করেছে, সবকিছুর বিচার আইনের মাধ্যমে হবে। দল ও দেশের স্বার্থে ধৈর্য ধরুন।’
প্রবাসীদের প্রতিক্রিয়া ও বিতর্ক : বাংলাদেশি প্রবাসীদের মধ্যে এ ঘটনা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই বলেছেন, দেশের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এখন বিদেশের মাটিতেও ছড়িয়ে পড়ছে, দেশের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করছে। অন্যদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি ও এনসিপি নেতারা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা পাননি। আবার কেউ কেউ সমালোচনা করেছেন যে, প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস সরকারি প্রটোকল মেনে নিরাপদে চলে গেলেও তাঁর সফরসঙ্গীরা নিরাপত্তাহীন থেকে যান।
ম্যানহাটনে ফের বিক্ষোভ : জেএফকের ঘটনার পর আওয়ামী লীগের প্রবাসী নেতা-কর্মীরা ম্যানহাটনের গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলের সামনে বিকাল ৫টার দিকে আবারও বিক্ষোভ দেখায়। এর জবাবে আখতার হোসেনের নেতৃত্বে একদল নেতা-কর্মী হোটেলের নিচে অবস্থান নিয়ে ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ, ওয়ান টু থ্রি ফোর ফ্যাসিজম নো মোর’ স্লোগান দেন। এ সময় ওই এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।