ব্যাপক হারে নিউজিল্যান্ড ছাড়ছেন দেশটির নাগরিকরা। এতে দেশটির অর্থনীতি ও কর্মক্ষেত্রে ব্যাপক সংকট তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে অভিবাসী কর্মীদের স্থায়ী বসবাস প্রক্রিয়া সহজ করছে দেশটির সরকার।
মঙ্গলবার দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিবিষয়ক মন্ত্রী নিকোলা উইলিস এই ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, দু’টি নতুন রেসিডেন্সির (স্থায়ী বসবাস) পদ্ধতি চালু করা হবে।
তার মতে, দক্ষ ও অভিজ্ঞ অভিবাসীরা কর্মক্ষেত্রে শূন্যতা পূরণে সহায়তা করতে পারবেন।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা আমাদের জানিয়েছেন যে, গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও অনেক অভিবাসীর জন্য রেসিডেন্সি পাওয়া খুব কঠিন ছিল।
নতুন রেসিডেন্সির নিয়ম ২০২৬ সালের মাঝামাঝি থেকে চালু হবে। প্রথম পদ্ধতিতে সুযোগ পাবেন সেসব অভিবাসী যাদের ভালো চাকরি আছে এবং যথেষ্ট অভিজ্ঞতা ও নির্দিষ্ট পরিমাণ বেতন রয়েছে।
দ্বিতীয় পদ্ধতিতে সুযোগ পাবেন সেসব অভিবাসী যারা কারিগরি বা টেকনিক্যাল কাজ করেন এবং তাদের পড়াশোনা, কাজের অভিজ্ঞতা ও ন্যূনতম বেতন ঠিক আছে।
একটি পদ্ধতিতে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে ভালো চাকরি ও অভিজ্ঞতাসম্পন্নদের জন্য, আরেকটি পথ কারিগরি কাজ জানা ও অভিজ্ঞদের জন্য।
অভিবাসনবিষয়ক মন্ত্রী এরিকা স্ট্যানফোর্ড বলেন, দক্ষ কর্ম-অভিজ্ঞতার এই পথ নিয়োগদাতাদের সহায়তা করবে অভিজ্ঞ কর্মীদের ধরে রাখতে, যারা ইতোমধ্যেই নিউজিল্যান্ডের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন। অন্যদিকে ট্রেডস ও টেকনিশিয়ান পথটি এমন খাতের জন্য রাখা হয়েছে যেখানে ব্যবহারিক দক্ষতাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়।
স্ট্যাটস এনজেড-এর তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত ৭৩ হাজার ৪০০ নিউজিল্যান্ডার দেশ ছেড়েছেন, আর ফিরে এসেছেন মাত্র ২৫ হাজার ৮০০ জন। সরকারের আগের পদক্ষেপ অনুযায়ী জানুয়ারিতে ‘ডিজিটাল নোমাড' (ভ্রমণকালে দূর থেকে কাজ করা পেশাজীবী) আকর্ষণে ভিজিটর ভিসার শর্ত শিথিল করা হয়। এতে ইনফ্লুয়েন্সাররাও অন্তর্ভুক্ত, যদি তারা বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পারিশ্রমিক পান।
ফেব্রুয়ারিতে ‘অ্যাকটিভ ইনভেস্টর প্লাস ভিসা’ বা গোল্ডেন ভিসার শর্ত শিথিল করা হয়, যাতে ধনী বিদেশিরা সহজে নিউজিল্যান্ডে বসবাসের সুযোগ পান।
বিজনেস নিউজিল্যান্ড সর্বশেষ এ পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, এতে নিয়োগদাতারা দক্ষ কর্মীদের ধরে রাখতে পারবেন।
তবে ইনফ্রাস্ট্রাকচার এনজেড জানিয়েছে, এটি আরও দ্রুত কার্যকর করা উচিত। কিন্তু সরকারে ছোট অংশীদার নিউজিল্যান্ড ফার্স্ট এমন প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছে। দলটির নেতা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইনস্টন পিটার্স বলেছেন, এটি একটি লক্ষ্যহীন অভিবাসন প্রস্তাব।
তিনি আরও বলেন, নিউজিল্যান্ডকে ব্যবহার করা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার সোপান হিসেবে। আমরা তাদের গ্রহণ করি, প্রশিক্ষণ দিই, দক্ষতা বাড়াই, পরিবারকে দেখাশোনা করি, তারপর তারা দেশ ছেড়ে চলে যায়।
স্ট্যাটস এনজেড অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যারা অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমিয়েছেন, তাদের ৩৫ শতাংশের জন্ম নিউজিল্যান্ডে নয়।
পিটার্স সতর্ক করে বলেন, আমাদের এমন একটি স্মার্ট অভিবাসন নীতি দরকার, যা নিউজিল্যান্ডের নিয়োগদাতা, শিল্পখাত ও স্থানীয় কর্মীদের চাহিদাকে অগ্রাধিকার দেবে-অযৌক্তিকভাবে অভিবাসন বাড়িয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করবে না। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
বিডি প্রতিদিন/একেএ