চট্টগ্রাম ওয়াসার ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান-২০১৬ অনুসারে নগরে খাল আছে ১৬৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ৫৭টি। কিন্তু সিডিএর ২০১৭ সালে নেওয়া মেগা প্রকল্পের আওতায় সংস্কার-সম্প্রসারণ করা হচ্ছে ৯৭ কি.মি. দৈর্ঘ্যরে ৩৬টি খাল। ৬৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ২১টি খাল প্রকল্পের বাইরে থেকে যায়। ফলে মেগা প্রকল্পের শতভাগ সুফল নিয়ে তৈরি হয় সংশয়।
এরই মধ্যে ২১ খাল নিয়ে একাধিক পরিকল্পনা ও খালের সামগ্রিক অবস্থা নিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত হয়।
একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা হলেও কাজটি বাস্তবায়ন হয়নি। পরিকল্পনা ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে পার হয় আট বছর। অবশেষে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ২১ খাল পুনরুদ্ধারে ‘চিটাগাং ইনটিগ্রেটেড সলিড ওয়েস্ট অ্যান্ড ড্রেনেজ ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট’ শীর্ষক প্রাক সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু করেছে। নেদারল্যান্ডসের একটি প্রতিষ্ঠান চার মাসের মধ্যে কাজটি শেষ করার কথা।
বর্তমানে নগরে প্রায় ৭০ লাখ মানুষের বসবাস। দৈনিক প্রায় ৩ হাজার ২০০ টন বিভিন্ন প্রকারের বর্জ্য উৎপাদন হয়। এসব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও জলাবদ্ধতা নিরসন- দুটিই সংস্থাটির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ২১ খাল সংস্কার-উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। এটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই পরিকল্পনা চলছে। এবার নেদারল্যান্ডসের একটি প্রতিষ্ঠান নগরের টোটাল সলিড ওয়েস্ট অ্যান্ড ড্রেনেজ ম্যানেজমেন্ট নিয়ে প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই করছে। এটি কেবল খাল নয়। ইাতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। চার মাসের মধ্যে শেষ করার কথা। কাজটি হলে মেগা প্রকল্পের সুফলও বেশি পাওয়া যাবে।
চসিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে সিডিএ মেগা প্রকল্পের আওতায় ৩৬টি খালের সংস্কার-উন্নয়নে প্রকল্প গ্রহণ করে। কার্যত এরপর থেকেই ২১টি খাল নিয়ে শুরু হয় আলোচনা। ২০২২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় ২১ খাল নিয়ে চসিকের প্রকল্প গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। ২০২২ সালের ২৩ আগস্ট চসিক ২১টি খালের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগে দরপত্র আহ্বান করে।
এতে ১০টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এর এক বছর পর ওয়াশো ইঞ্জিনিয়ারস লিমিটেডকে ৩৪ লাখ টাকায় নিয়োগ দেওয়া হয়।
কিন্তু ২০২৪ সালের শুরুতে প্রতিষ্ঠানটি কাজ করতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানও কাজ করতে অস্বীকৃতি জানায়। ২০২৫ সালের ১৫ জুন নেদারল্যান্ডস দূতাবাসে নিযুক্ত জলাবদ্ধতাবিষয়ক প্রতিনিধির কাছে এ ব্যাপারে সহযোগিতা চেয়ে চসিক চিঠি দেয়। চিঠিতে চসিকের আওতাধীন এলাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য প্রাক-সম্ভাব্যতা সমীক্ষা যাচাইয়ে সহযোগিতা চাওয়া হয়। নেদারল্যান্ডস এতে সাড়া দিয়ে প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু করে। চসিকের ২১ খাল হলো- চট্টেশ্বরী খাল, ১৫ নম্বর ঘাট এয়ারপোর্ট খাল, রামপুর খাল, বালুখালী খাল, কৃষ্ণখালী খাল, কুয়াইশ খাল, ফরেস্ট খাল, উত্তর সলিমপুরের বারিঙ্গাছাড়া খাল, ভাটিয়ারীর ধামাইর খাল, নেভাল একাডেমি, চরপাড়া, হোসাইন আহমেদপাড়া, সিইপিজেড আনন্দবাজার, সিইপিজেড নতুনপাড়া, উত্তর হালিশহর, উত্তর কাট্টলী, লতিফপুর এবং সলিমপুরের স্লুইস গেটের সঙ্গে সংযুক্ত খাল।